একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ, ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ যুদ্ধাপরাধীর মৃতুদ-
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে এলাকায় অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশনের আনা তিন অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামিদের সাজা কার্যকর করতে হবে। আসামিদের মধ্যে আব্দুল আজিজ মিয়া (৬০), মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬৩), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৬০), মো. নাজমুল হুদা (৬২) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬৪) পলাতক। রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন কেবল মো. আব্দুল লতিফ (৬৩)।
পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। তিন অভিযোগের মধ্যে প্রথমটিতে গাইবান্ধার মৌজামালি বাড়ি গ্রামে গিয়ে লুটপাট, স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে আটক, অপহরণ ও নির্যাতন এবং পরে দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে একজনকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে হত্যার ঘটনায় আসামিদের আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
দ্বিতীয় অভিযোগ- সুন্দরগঞ্জ থেকে ছাত্রলীগ নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে ধরে মাঠেরহাট রাজাকার ক্যাম্প এবং থানা সদরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ মাটির নিচে চাপা দেওয়ার ঘটনায় ছয় আসামির সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগ- সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটকে রেখে নির্যাতন এবং পরে নদীর ধারে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনাতেও আসামিদের সবার প্রাণদন্ডের রায় এসেছে।
রায়ের পর প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন জানান, আমরা রায়ে খুশি। অন্যদিকে লতিফের আইনজীবী খন্দকার রেজাউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আপিল করব।
পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, প্রসিকিউশন এ মামলায় যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে না। ২০০১ ও ২০০৭ সালের যেসব দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো রাজৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। পলাতক আসামিরা আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সবাই খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই আইনজীবী।
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের মামলায় রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা যায়। তবে পলাতক পাঁচ আসামিকে সে সুযোগ নিতে হলে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
গতবছর ২৮ জুন এই ছয় আসামির বিচার শুরু করে আদালত। ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ২৯টি মামলার ৬২ আসামির মধ্যে তিনজন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৫৯ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৬ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন