‘পিইসি, জেএসসি জেডিসি পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই’
তরিকুল ইসলাম সুমন : শিশুদের ওপর পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। গতকাল বুধবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। ‘শিশুবান্ধব সমাজের সন্ধানে’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে শিশুশিক্ষার সংগঠন সহজপাঠ।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ভালো শিক্ষা পাওয়া নয়, তাদের লক্ষ্য কেবল প্রথম হওয়া। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা এখন পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শোচনীয়। এখানে শিশুদের পরীক্ষার নামে রীতিমতো পীড়ন করা হচ্ছে। এতে বিন্দুমাত্র আনন্দযোগ নেই। শিক্ষাব্যবস্থা এখন পরীক্ষাসর্বস্ব, জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আমরা নষ্ট করে ফেলেছি।
তিনি বলেন, শিক্ষা কমিশন যখন ছড়া, চারুকলা, নৃত্য শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ করার কথা বলছে, তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভাবনা-চিন্তাই নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সেই অযৌক্তিক কথায় কর্ণপাত করলো।
স্বাধীনতার পর গঠিত কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ‘নৈতিক শিক্ষা’কে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার কর্মকর্তারা তাদের সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে মাদ্রাসায় ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রণয়ন করেন।
সভায় অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, এখন আমাদের শিশুদের ওপর যেভাবে পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হয়, পৃথিবীর আর কোনও দেশে তা করা হয় বলে মনে হয় না। আর পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে ছুটছেন। এ কাজে শিক্ষক ও অভিভাবকরা জড়িত। ফলে শুরুতেই একটি শিশুর নৈতিকতা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্বদিব্যালয়ের শিক্ষক শাহিন ইসলাম বলেন, আমরা শিশুদের নিজেদের মতো করে শিক্ষা দিতে চাই। কিন্তু তারা কিভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় সেটা কি কখনও জানতে চেয়েছি? তাছাড়া এখন যারা শিক্ষক হচ্ছেন তাদেরও দূরাবস্থা। ছাত্রদের কাছে শিক্ষকদের রোল মডেল হতে হবে। শিক্ষকদের শুধু কথায় নয়, কাজেও তা প্রমাণ করতে হবে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ