জিয়াউর রহমান বা কারো ছবি নেই কলকাতা জাদুঘর পরিচালক
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : কলকাতা জাদুঘরে জিয়াউর রহমান বা অন্য কারো কোনো ছবি নেই বলে জানিয়েছেন ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কলকাতা ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পরিচালক রাজেশ পুরোহিত। তবে সেই তথ্য উদ্ধারে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছে। কেননা ওয়েবসাইটে দেওয়া ওই মিউজিয়ামের তিনটি নম্বরেরই অস্তিত্ব নেই, সেগুলোয় ডায়ালের পর পরিসেবা বিভাগের সাহায্য নিতে বলা হচ্ছে।
অগত্যা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ছাড়া বাকি সব ছবি ব্যারাকপুরের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে স্থান পাবে বলে পরিবেশিত সংবাদে যে তথ্য রয়েছে, তাতে সেখানকার পরিচালক ও লাইব্রেরিয়ানকে কলকাতার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর কল করেও যথোপযুক্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে জানা যায়নি, কারণ তারা ১১টার পর অফিসে আসেন। এতে বাধ্য হয়েই সরাসরি রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী ডক্টর মহেষ শর্মার অফিসে কল দিতে হয়। সেখানকার কর্মকর্তা আর পি সিংয়ের কাছে সংশ্লিষ্ট মিউজিয়ামটির একটি মাত্র নম্বরই ছিল, যা ওই বিকল নম্বরগুলোরই একটি। সেটি জানাতেই বললেন, ‘১০ মিনিট পর আবার ফোন করুন, উদ্ধার করে দিচ্ছি’। তাতে পুনরায় কল দিয়ে পাওয়া গেল কলকাতা ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পরিচালক রাজেশ পুরোহিতের সেলফোন নম্বর। এবার রাজেশ পুরোহিতের সেলফোনে কল দিয়ে ইংরেজিতে নিজের পরিচিতিসহ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে আগেই পাঠানো ই-মেইল মিডিয়া ইঙ্কোয়ারিটি উল্লেখ করতেই বললেন, ‘ইফ ইউ ক্যান স্পিক বাংলা, আই ক্যান অলসো স্পিক বাংলা’। বললাম, ‘আর ইউ ফ্রম ক্যালকাটা’? বললেন, ‘নো, ঊড়িষা’। আরো বললেন, ‘আমি এলাহাবাদ থেকে এসে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, তাই সব কিছু কলকাতায় জেনে উঠতে পারিনি। আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি। আর আপনি আমাকে মিউজিয়াম সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ে আমার সেলফোনেই কল দিতে পারেন, বদারেশন হবে না। তারপর যথারীতি ই-মেইলের প্রত্যুত্তরটিও এসে গেল।
তাতে ২২ নভেম্বর, ২০১৭ তারিখে প্রেরিত আইএম(টি)৩৬ মিসলেনিয়াস স্মারক সংবলিতপত্রে কলকাতা ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পরিচালক রাজেশ পুরোহিত ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘ওই সম্পর্কিত সংবাদটি (দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পরিবেশিত) ভিত্তিহীন এবং পুরোপুরি কল্পিত, কেননা সে ধরনের কোনো ফাইল ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে নেই, এমনকী সে ধরনের কোনো গ্যালারি বা প্রদর্শনী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কোনো ছবি নেই এবং কোনো রিপোর্টারের সঙ্গে রাজেশ পুরোহিত এ ধরনের আলোচনাই করেননি’। এছাড়াও জানিয়েছেন, ‘জিয়াউর রহমান কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে নেই। পাশাপাশি প্রদর্শনীর জন্য কোনো ব্যক্তিবর্গের ছবিরও সেকশন নেই। আমি অরিজিৎ দাস চৌধুরী পরিবেশিত সংবাদের নিন্দা জানাই এবং খ্যাতিসমৃদ্ধ ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতা ও তার পরিচালককে জড়ানোর জন্য কাউন্সিল মাধ্যমে মানহানির মামলা দায়েরের আগে কৈফিয়ত তলব করতে যাচ্ছি’। এতে পরিশেষে লিখেছেন, ‘সংবাদটি আমাদের নজরে আনার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে জানাচ্ছি যে, যেহেতু সাম্প্রতিক ইতিহাসে মিউজিয়ামটিতে সে ধরনের কোনো প্রদর্শনী হয়নি বা নেই, সেহেতু প্রদর্শনগত কোনো নম্বরও নেই’। অবশ্য পরিচালক রাজেশ পুরোহিত সেই চিঠির কপি ই-মেইলে কলকাতার রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ও ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, নয়াদিল্লির শাস্ত্রী ভবনে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী ডক্টর মহেশ শর্মা এবং একই ভবনের ‘সি’ উইংয়ে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও পাঠিয়েছেন।
পরে ফোনে কথোপকথনে এই প্রতিনিধিকে পরিচালক রাজেশ পুরোহিত জানিয়েছেন যে, এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের ‘প্রাইমা ফেসি’ বা উদ্দেশ্যটি কী? এটি একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্টের শামিল। বিষয়টি ভারতের সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা ওই সংবাদদাতার কাছে যথোপযুক্ত ক্ষমা প্রার্থনা প্রত্যাশা করছি, নচেৎ আইনগত ব্যবস্থার প্রস্তুতিটিও থেমে নেই। এসময় এই প্রতিনিধি যখন নিজেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিটি আশির দশকে মিউজিয়ামটিতে দেখেছেন এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশের একজন সাবেক সংসদ সদস্য তা দেখেছেন বলে একটি টেলিভিশন টক-শোতে উল্লেখ করেছেন, তাতে রাজেশ পুরোহিতের উত্তরটি ছিলÑ ‘সেটি গত বছর, এ বছর নয়’।
ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স