হাইকোর্টের নির্দেশনা, বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার?
নাসিমা খান মন্টি : বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত হাইকোর্ট। হাইকোর্টের যে কোনো আদেশ অবশ্য পালনীয়। বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানারকম নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তবে এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না অনেক ক্ষেত্রেই।
গত ২০ নভেম্বর ২০১৭, হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছে, রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতালে বিলের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ গরিব ও দুস্থ রোগীরা বিল পরিশোধে সক্ষম না হলে লাশ জিম্মি করে বিল আদায়ের চেষ্টা করা যাবে না। রায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে একটি সার্কুলার জারি করে সকল অনুমোদিত ক্লিনিক ও হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ করতেই হাইকোর্টের এই উদ্যোগ।
গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ হাইকোর্টের আর একটি রায় ছিল, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগের ওজন নিয়ে। এই রায়ে বলা হয়েছিলÑ প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন শিক্ষার্থীর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আরো বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই মর্মে ৩০ দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে এবং এই নির্দেশনা পালন হচ্ছে কি না তা তদারক করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। এর আগে ২০১৪ সালেও এই সম্পর্কিত একটি আদেশ দেয়া হয়েছিল। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় যায়নি। শিশুদের কাঁধে ভারও কমেনি।
আর দুস্থ রোগীরা তাদের স্বজনদের মৃতদেহ বা অসুস্থ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনতেও হয়তো নাকের নোলক বা সামান্য জমি বিক্রি করে বিল পরিশোধ করবে। এ অবস্থারও কোনো পরিবর্তন হবে কি না তা দেখার বিষয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত একটি তহবিলও গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে এক্ষেত্রে যেন কোনো দুর্নীতি শুরু না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
তাহলে আমাদের ভরসার জায়গা কোথায়? মানবাধিকার সংগঠন ও সিভিল সোসাইটিও কি এই বিষয়ে আর একটু মনোযোগী হতে পারে না? এই সকল রায় বাস্তবায়নে হাইকোর্টও আরো একটু তৎপর হবে এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট রায়ের বাস্তবায়ন হবে, এটাই আমাদের বিনীত প্রার্থনা।
সূত্র : আমাদের সময়.কম ২০ নভেম্বর, ২০১৭; নিউ এজ বাংলাদেশ, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬; দৈনিক প্রথম আলো, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি