সদকায়ে জারিয়ার ফজিলত মোস্তফা কামাল গাজী
সদকায়ে জারিয়া আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান করা এবং জারিয়া অর্থ প্রবহমান, সদাস্থায়ী প্রভৃতি। সদকায়ে জারিয়া হলো এমন দান, যার সওয়াব কখনো শেষ হবে না বরং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সকল আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটে জিনিস বাকি থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম ৩. নেক সন্তান, যে তার পিতামাতার জন্যে দোয়া করবে। (মুসলিম : ৪৩৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ, এতিমখানা তৈরি, গরিব ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা, জনকল্যাণমূলক কাজ যেমন, রাস্তাঘাট ও হাসপাতাল নির্মাণ, পুকুর খনন, নলকূপ বসানো, পাঠাগার ও সেতু নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, ইসলামি বই দান প্রভৃতিই হলো সদকায়ে জারিয়া। মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের পর তাতে যতো নামাজ আদায় হবে, কুরআন তেলাওয়াত হবে, জিকির ও অন্যান্য নেক আমল হবে আমলকারীর সওয়াবের পরিমাণ সওয়াব দানকারীর আমলনামায়ও লিখা হবে। মাদ্রাসা থেকে যতো তালেবে ইলম হাফেজ ও আলেম হবে, তারা পুরো জীবনে যতো নেক আমল করবে তার সমপরিমাণ সওয়াব দানকারীকেও দেয়া হবে। এমনিভাবে জনকল্যাণের জন্য ফ্রিতে যা নির্মাণ করা হবে তা যতদিন পর্যন্ত বাকি থাকবে ততদিন দানকারীর আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। আল্লাহ প্রদত্ত এতো বড় নেয়ামত অর্জনের জন্যে ধনীদের বেশি বেশি দান করা উচিৎ।
হাদিসে বর্ণিত মৃত্যুর পর সওয়াব অব্যাহত থাকার দ্বিতীয় স্তর হলো উপকারী ইলম। অর্থাৎ কেউ মারা যাওয়ার পূর্বে অন্য কাউকে যদি দ্বিনি ইলম শিক্ষা দিয়ে যায়, সে ব্যক্তি নিজে আমল করে ও অন্যকে সে ইলম শিক্ষা দিয়ে যতো সওয়াব অর্জন করবে, শিক্ষাদানকারী মৃতব্যক্তি কবরে বসে সে সওয়াব পেতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি শরিফ : ৩৫৪)
হাদিসে বর্ণিত মৃত্যুর পর সওয়াব অব্যাহত থাকার তৃতীয় স্তর হলো নেক সন্তান, যে মাতা-পিতা মারা যাওয়ার পর তাদের জন্য দোয়া করবে। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য সুশিক্ষা এবং সুন্দর চরিত্র গঠন ব্যতিরেকে উত্তম কোনো সম্পদ রেখে যেতে পারে না। (বুখারি : ৩৭৬)
সন্তানকে সুশিক্ষা না দিয়ে পিতা যদি লাখ লাখ টাকা রেখে যায় তবে এর দ্বারা পিতা-পুত্র কারো বিন্দুমাত্র উপকার হবে না। বরঞ্চ এই সম্পদ অসৎ পথে ব্যয় করে নিজেও ধ্বংস হবে, পিতাকেও কবর জগতে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করবে। তাই নিজ সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে মানুষ করা পিতা-মাতার একান্ত কর্তব্য। ইউপি, ভারত।