ভারতে আবারো বিজেপির ইভিএম জালিয়াতি নিয়ে তোলপাড়
আরটিএনএন : ভারতে আবারো কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ইভিএম জালিয়াতি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উৎসবের মেজাজেই চলছিল পৌরসভার ভোট। মাস আটেক আগেই বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। স্বাভাবিকভাবেই পৌরভোটেও আত্মবিশ্বাস নিয়েই নেমেছিল গেরুয়া শিবির। তাল কেটে গেল মেরঠের একটি ওয়ার্ডে। ভোটার বোতাম টিপলেন ‘হাতি’ চিহ্নের পাশে। ভোট পড়ল ‘পদ্মফুলে’। যাকেই ভোট দিন, ভোট যাচ্ছে বিজেপির ঘরে- এই অভিযোগ অনেক দিন ধরেই তুলছে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিএসপি নেত্রী মায়াবতীই সর্ব প্রথম সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই অভিযোগ তুলেছিলেন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) কারচুপি করে জিতেছে বিজেপি, ইঙ্গিতে এমনই দাবি করেছিলেন তিনি।
মেরঠেও বৃহস্পতিবার মায়াবতীর দলেরই এক সমর্থক অভিযোগটি তুললেন। তবে এবার খালি হাতে নয়, নিজের ভোটদানের ভিডিও রেকর্ডিং করে ওই ভোটদাতা দেখালেন যে, তিনি বিএসপি-কে ভোট দিলেন, ভোট পড়ল বিজেপি-তে।
তসলিম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগটি তুলেছেন। তিনি নিজের ভোটদানের ভিডিও রেকর্ডিং করেন এবং সেই ভিডিও তুলে ধরে দেখান যে, বোতাম টেপা হচ্ছে হাতি চিহ্নের পাশে, ভোট পড়ছে পদ্ম চিহ্নে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ছেড়ে দেন তসলিম আহমেদ। ভিডিওতে দেখা গেছে, তসলিম আহমেদ ভোট দিচ্ছেন বিএসপি প্রার্থীকে। কিন্তু ভোট পাচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী।
তসলিমের ভিডিও ভাইরাল হতেই ঝড় উঠেছে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক শিবিরে। ইভিএমে কারচুপি করে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের পৌরভোটে জেতার চেষ্টা করছে বলে বিরোধী দলগুলো হইচই শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। মেরঠে যে ইভিএম-টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেই ইভিএম-টিতে কোনো গোলমাল রয়েছে বলে কমিশনের দাবি।
মেরঠের অতিরিক্ত জেলাশাসক মুকেশ কুমার বলেন, ‘যে মেশিনে গোলমাল হচ্ছিল, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সেটা আমরা বদলে দিয়েছি।’
ভারতে ইভিএমে বিজেপির ভোট জালিয়াতির ঘটনায় তোলপাড় চলছে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে। ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় একজোট হলেন বিরোধীরা। ফলে রামনবমীর ছুটির পর অধিবেশন বসলেও একেবারে শুরুতেই স্থগিত করে দিতে হল রাজ্যসভা।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই ইভিএমে কারচুপির প্রশ্নে সরব মায়াবতী ও অরবিন্দ কেজরীবাল। তাদের অভিযোগে ইন্ধন জুগিয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভিন্দের একটি ঘটনা। সেখানে উপনির্বাচন উপলক্ষে একটি ‘মক’ ভোটদান পর্ব চলছিল। সেখানে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সামনেই দেখা যায়, ইভিএমের যে বোতামই টেপা হোক, ভোট পড়ছে বিজেপির ঘরে! এর পরেই বিরোধীরা একজোট হয়ে বৃহস্পতিবার সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।
বিরোধীদের দাবি, আসন্ন দিল্লি পুরভোট, গুজরাত বিধানসভাসহ সব উপনির্বাচনে কাগজের ব্যালট ফেরাতে হবে। সেই দাবি বৃহস্পতিবার ফের খারিজ করেছে নির্বাচন কমিশন।
কারচুপি প্রসঙ্গে তাদের দাবি, বিদেশের ইভিএমগুলো কম্পিউটার-ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় হ্যাকিং-এর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ দেশের ইভিএমে কম্পিউটার-ইন্টারনেটে যুক্ত করার প্রযুক্তি থাকে না। ফলে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ভিন্দের ইভিএমে কেন সব ভোট বিজেপির ঘরে পড়ছিল, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কমিশন। বলা হয়েছে, ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেলে তবেই এ নিয়ে কথা বলা হবে।
এ বিষয়ে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আগে আমারও ইভিএম-এর উপরে আস্থা ছিল। কিন্তু ভিন্দের ঘটনা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আপনারা বিষয়টি নিয়ে সরব হন।’
এদিন অধিবেশন বসতেই রাজ্যসভায় রুটিন কাজ বন্ধ করে ইভিএম নিয়ে আলোচনার দাবিতে আলাদা করে চারটি নোটিস দেন কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্যরা। কিন্তু আলোচনায় রাজি হননি ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন।
নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি জানান, ইভিএমে কারচুপি অসম্ভব। বিরোধীদের অভিযোগের প্রশ্নে কুরিয়েন জানিয়ে দেন, রাজ্যসভার বদলে বরং নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হোক বিরোধীরা।
কুরিয়েন এ কথা বলতেই একজোটে ওয়ালে নেমে আসেন বিরোধী নেতারা। বিজেপিকে ‘বেইমান’ তকমা দিয়ে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে চূড়ান্ত কারচুপি করে জিতেছে বিজেপি।’
বিজেপির সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি পাল্টা বলেন, ‘এই ইভিএমে-ই হওয়া ভোটে বিজেপি বিহার, দিল্লি, পঞ্জাবে হেরেছে। তখন কেউ কারচুপির অভিযোগ তোলেনি।’
পাল্টা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘ধরা যাতে পড়ে, সে জন্য উত্তরপ্রদেশে বেছে বেছে কারচুপি করেছে নকভির দল।’ তাকে সমর্থন করেন সপা’র রামগোপাল যাদব।
সপা’র নরেশ অগ্রবালের অভিযোগ, গুজরাতের যে সংস্থাটি ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে, তার সঙ্গে বিজেপি নেত্রী তথা লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের ছেলে জড়িত।
পরে নকভি পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন কুরিয়েন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ