অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য নিয়ে শিক্ষিত প্রবাসীদের ক্ষোভ
বিশ্বজিৎ দত্ত : অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে শিক্ষিত প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছেন দেশি ও প্রবাসী অনেকেই। দেশিদের পক্ষে উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার তার পক্ষে বলছেন। অন্যদিকে প্রবাসীরা অনেকেই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন। কেউ আবার তাকে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আয়োজিত ইয়ুথ হাঙ্গারদের একটি সমাবেশে ২০১৫ সালে একটি বক্তব্য দেন। একপর্যায়ে বাংলাদেশের শিক্ষিত প্রবাসীদের সম্পর্কে বলেন, তারা দেশ থেকে অনেক কিছু নিয়ে যান, কিন্তু কিছু দেন না। বরং বাবা ও মা মৃত্যুর পর দেশে আসেন তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি প্রস্তাব করেন, এই ধরনের প্রবাসীদের সম্পদের ৩ শতাংশ দেশে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। যদি তা তারা না করেন, তবে তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করা প্রয়োজন। কারণ তারা দেশের ঋণ পরিশোধ করছে না। অন্যদিকে সাধারণ অশিক্ষিত প্রবাসী, যাদের রাষ্ট্র কিছুই দেয়নি, তারা দেশে রেমিটেন্স পাঠান। তাদের রেমিটেন্সে আমাদের রিজার্ভ বাড়ে। এই কথা বলে তিনি একজন প্রবাসী মহিলার বর্ণনা দেন। যিনি এ বক্তব্যের পর একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে আক্রমণ করেন।
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যেভাবে এই ঘটনাটি বলেছেন তা হলো, কালকে এক ভদ্রমহিলা, যিনি আমেরিকায় থাকেন। জ্যাম, জেলি, রুটি-মাখন, পনির খেয়েদেয়ে বেশ ভালই আছেন। সেই ভদ্রমহিলা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বিয়ের আসরে মান-ইজ্জতের একটা ব্যাপার আছে। তার যে নখ, দেবীর চেয়ে ভয়ংকর। আমার কলজে খাওয়ার উপক্রম। কানাডা প্রবাসী শওকত আলী সাগর মহিলাকে এই কথা বলায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষিত প্রবাসীদের অন্য সমালোচনার কোনো উত্তর দেননি। তিনি মহিলার অবমাননায় প্রশ্ন রেখেছেন, একজন মহিলা সম্পর্কে ভরা মজলিসে মঞ্চের বক্তৃতায় এই ধরনের বর্ণনাই কি আমাদের আলোকিত রুচিবোধ।
উত্তরে আব্দুন নূর তুষার লিখেন, ওই মহিলাই কিছুদিন আগে সাগরকেই যা-তা লিখেছেন। একজন রাক্ষসীর বর্ণনা তো দেবীর মতো হবে না। তিনি লিখেন- সাগর ভাইকে এই মহিলা চতুস্পদ প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে পাদুকা পুরাণ উপহার দিতে চেয়েছেন। মোহম্মদ গিয়াস উদ্দিন নামের একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লিখেছেন- বিদেশে যেখানেই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ পা রাখবেন, সেখানেই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে। রায়হান মনোয়ার হোসেন নামের আরও একজন শিক্ষিত প্রবাসী আবদুন নূর তুষারকে লিখেন, রাবার বাগান করার নামে কৃষি ব্যাংকের ৩১ কোটি টাকা মেরে দেওয়া আলোকিত মানুষের মুখে এরকম কথা মানায় না। তিনি সেইসঙ্গে ডেইলি স্টারের একটি লিংক যুক্ত করেন। রিপোর্টে রয়েছে, বান্দরবানে রাবার বাগান করার জন্য আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদসহ ১৫৩ জন জমি নেন। তারা কৃষি ব্যাংক থেকে ৩১ কোটি টাকা ঋণও নেন।
এটার কোনো উত্তর অবশ্য আব্দুন নূর তুষার দেননি। আহমেদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী লিখেন, আলোকিত মানুষের আড়ালে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ নিজেকে প্রচারের আলোয় নিজেকে উপস্থাপিত করে রেখেছেন। তার লেখনি ৩০-এর দশকের একজন লেখকের অনুকরণ। সাহিত্যিক কুলদা রায় ৩০-এর দশকের লেখকের পরিচয় দিয়ে দেন। তিনি হলেন বুদ্ধদেব বসু। পরিশেষে ক্রন্দসী ভাস্কর নামের একজন লিখেন, বিদেশে বসবাসকারী গুটিকয়েক ফেবুজীবী হঠাৎ করে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের পেছনে লেগেছেন। উনার কথার গভীরতা ও উপস্থাপনের রসবোধ ওদের বোধের বাইরে বলেই এরা এমনটা করছে।