অনড় আ.লীগ-বিএনপি : নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আগামীতে উত্তপ্ত হবে রাজনীতি
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার প্রশ্নে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনড় অবস্থানেই রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বক্তব্যে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে নয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। চেয়ারপারসনের এমন বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থানকারী বিএনপি নেতারাও চুপ হয়ে গেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকালীন সরকার সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে থাকার বিষয়ে অনড় অবস্থানেই রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে কোনো আলোচনা তারা বিএনপির সঙ্গে করবে না। এক্ষেত্রে আন্দোলন করে দাবি আদায় করা ছাড়া বিএনপির সামনে তেমন কোনো পথ নেই।
সূত্র জানায়, শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানুয়ারিতেই বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে অতীতের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তিনি তার আপসহীন নেত্রীর ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে চান। এ কারণে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে আগামীতে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে রাজনৈতিক অঙ্গন।
দেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগে সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয়েছÑ সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে: (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নববই দিনের মধ্যে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদ নির্বাচনকালীন সময় নিরপেক্ষ ও সহায়ক সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই। বিএনপির দাবি মানতে হলে সংবিধানের সংশোধনী আনতে হবে।
এদিকে নির্বাচন পদ্ধতি প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আর নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে শেখ হাসিনার সরকার। তাই শেখ হাসিনার সরকারই সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করে, বিএনপি ও জামায়াতের সংগঠনিক অবস্থা এখন খুব দুর্বল। তাই সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আন্দোলনে জনগণের সমর্থনও পাবে না তারা।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সফল সমাবেশ করার পর উজ্জীবিত বিএনপি। বিএনপির নেতৃবৃন্দ ধারণা করছে, বিএনপির জনপ্রিয়তা অতীতের মতোই রয়েছে। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা, রোহিঙ্গা নানা ইস্যুতে সরকার বেশ চাপে রয়েছে। এসময় কূটনৈতিক চাপ ও রাজপথে আন্দোলন করে তারা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে পারবে। তাই বিএনপি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ বা সহায়ক সরকারের দাবিতে নতুন করে সোচ্চার হচ্ছে। সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী জানুয়ারিতে লং মার্চ, বড় শহরগুলোয় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে।
আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে বাইরে রাখতে। এ নির্বাচন দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেবে না। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে তারা বাধ্য হবে। শুধু নিরপেক্ষ সরকরের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সভাপতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুসারে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সরকার সকল সহযোগিতা দেবে। বিএনপির আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। যড়যন্ত্র ও আন্দোলন করে তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।