রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারি উদ্যোগের কার্যকারিতা এখনো সেভাবে দেখছি না : জিএম কাদের
আশিক রহমান : যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে আলাদা আলাদা ভাবে অবস্থান নিই আমরা সেটা কখনোই শক্তিশালী অবস্থান হতে পারে না। সরকার যতই শক্তিশালী হোক, সংকট নিরসনে সবার ঐক্য শক্তিবৃদ্ধি পায় এবং ঐক্যবদ্ধ অবস্থানই শক্তিশালী অবস্থানÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অমানবিক অবস্থানের বিপক্ষে আমরা। কিন্তু এর প্রতিবাদ, প্রতিকারের বিষয়ে আমরা আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করছি। একই সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে বৈপরিত্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনগণ, রাজনৈতিক দল, সরকারÑ সবাই যদি একাট্টা হতে পারতাম তাহলে শক্তিটা অনেক বৃদ্ধি পেত। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি অনেক সহজ হতো।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ না হয়ে আমরা (রাজনৈতিক দলগুলো) পরস্পরকে দোষারোপ করছি। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছে জনগণ। তারা বুঝতে পারছে না কোনটা ভালো, আর কোনটা মন্দ। সরকারও পরিষ্কারভাবে তাদের অবস্থানটা জনগণের কাছে তোলে ধরতে পারছে না। সব মিলিয়ে আমরা জগাখিচুড়ি অবস্থানে আছি। অথচ ওরা ওখানে একাট্টা। যদিও তাদের অবস্থান নৈতিক ও মানবিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। বিশ্বজনমতও তাদের বিপক্ষে। অথচ তারা একাট্টা হতে পারে, আর আমরা পারছি না।
এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, রাজনীতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থ বেশি দেখা, আর দলের চেয়ে দেশের স্বার্থ বেশি দেখব। দেশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থের মূল্য কখনোই আমরা বেশি দিব না। ব্যক্তিগত স্বার্থকে আমরা সবচেয়ে কম মূল্য দিব। আমাদের দেশে এটা মুখে বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো প্র্যাক্টিস করা হয়। আমাদের এখানে দেশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থ বেশি দেখানো হয়। দলীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তির স্বার্থ দেখা হয় বেশি। এখান থেকে আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না বের হতে পারব ততক্ষণ আমাদের যে প্রায়োরিটি অব দ্য কান্ট্রি, প্রায়োরিটি অব দ্য পিপলস তা সব সময়, শেষ পর্যন্ত তলানিতে গিয়ে থাকবে। এটা আমাদের সার্বিক রাজনীতির একটা বড় দুর্বলতা বলেই মনে করি আমি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। তবে এর কার্যকারিতা এখনো আমরা সেভাবে দেখছি না। এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপের মাত্রা, সেটা দেশীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে হোক তা অনেক বেশি হতে হবে। এতদিন ধরে সংকট নিরসনে যে কাজগুলো আমরা করেছি, এতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারের ওপর। তবে আমাদের যে ন্যায্য দাবি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটিকে বাধ্য করা, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ অনেককিছুই তারা এখনো সহজে মেনে নিচ্ছে বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার বিশ্বজনমতকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকেও দোষারোপ করার প্রবণতাও তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিচ্ছে বা নিবে এরকম কোনো পরিবেশ এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য অবরোধ একটা পথ। তাদের ওপর আগেও দীর্ঘদিন অবরোধ আরোপ ছিল, কিন্তু তারা সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি। ফলে তাদের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ যে কার্যকর হবে না তা সবার মোটামুটি ধারণা রয়েছে। সশস্ত্র শক্তি ব্যবহারের পক্ষে আজকাল কেউ থাকে না। যার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বলা হচ্ছে তাদের (মিয়ানমারকে) বুঝিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারলেই সবেচেয় ভালো হবে।
তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমাবিশ্বের সঙ্গে তাদের একটা খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। ওদের দৃষ্টিভঙ্গি যেদিক তারা হয়তো সেদিকেই সমর্থন দিতে চাইবে। সে কারণেই হয়তো তারা ওইভাবে অগ্রসর হচ্ছে না। আমাদের সরকারও হয়তো সেভাবে ওআইসিকে আমাদের পক্ষে আনার ক্ষেত্রে তেমনভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি।