৫ বছরেও মামলার বিচার শেষ হয়নি
মামুন আহম্মেদ খান : আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরের অগ্নিকা-ে নিহত ১১২ শ্রমিকের প্রাণহানির মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মূলত বিচারকাজ শেষ হচ্ছে না। আসামিপক্ষের লোকজনের হুমকি ও আর্থিক প্রলোভনের কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। প্রায় আড়াই বছর আগে মামলার চার্জ গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর এই ৭ সাক্ষীর মধ্যে দুইজনই মালিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগিরা সুবিচার পাবেন কিনাÑ তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শ্রমিক নেতারা। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ৫ বছর হয়ে গেল এখনো খুনিদের বিচার হল নাÑ এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। শতাধিক শ্রমিকের প্রাণ নিয়ে খুনিরা এখনো জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ‘সবকিছু সাজানো নাটক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ যাদের সাক্ষী করেছে তাদের এখন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা আদালতে এসে উল্টো সাক্ষী দিচ্ছেন। মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তারা শ্রমিককে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে সাক্ষী দেওয়া থেকে বিরত রাখছেন। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আলোচিত এ মামলার বিচার কাজ দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান তিনি।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী খোন্দকার আবদুল মান্নান বলেন, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে সাক্ষীরা তাদের আগ্রহ আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তড়িঘড়ি করে কিছু করতে চাচ্ছি না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলী কাজী শাহানারা ইয়াসমিন বলেন, মামলায় সাক্ষীদের প্রতি অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঘটনার পর গার্মেন্টস মালিক বেশকিছু সাক্ষীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। আর সেই ক্ষতিপূরণের কারণেই অনেকে আদালতে সাক্ষী দিতে চান না। আর সাক্ষী দিলেও তারা (ক্ষতিপূরণ পাওয়া শ্রমিক বা প্রলোভনে পড়া শ্রমিক) মালিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। ৭ জনের মধ্যে এ রকম দুজন সাক্ষী ছিলেনÑ যারা মূল কথা বলতে চাননি। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় মোট সাক্ষী ১০৪ জন। এ পর্যন্ত ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বাকি এখনও ৯৭ জন।
২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জজ এসএম কুদ্দুস জামান এ মামলার অভিযোগ গঠন করে পরবর্তী বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে স্থানান্তর করেন। সর্বশেষ চলতি মাসের ৮ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিনও পুলিশ আদালতে কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় বরাবরের মতোই রাষ্ট্রপক্ষ সময় আবেদন করেন। তা মঞ্জুর করে আগামী ১১ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন বিচারক প্রদীপ কুমার রায়। অপরদিকে চার্জশিটভুক্ত মোট ১৩ জন আসামির মধ্যে ৪ আসামি পলাতক ও অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশন কারখানায় ভয়াবহ এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১১২ জন নিহত ও দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হন।
পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দ-বিধির ৩০৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে চার্জশিট দেন। এতে তাজরিন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন ও চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ প্রতিষ্ঠানটির ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন