আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে
আমাদের অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকারে হায়দার আকবর খান রনো
আশিক রহমান : জামায়াতের মতো দল আবারও এদেশের ক্ষমতার অংশীদার হোক তা আমরা চাই না, চাইতে পারি না। কোনো মুক্তিযোদ্ধা কিংবা দেশপ্রেমিকও এমনটি চাইতে পারেন না। আমাদের তো প্রশ্ন, সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না কেন। জামায়াতকে আপনারা নিষিদ্ধ করুন। বর্তমানে দলটি নিষিদ্ধ না হলেও তাদের ক্ষমতা সীমিত। তবে দলটির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ঢুকে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিএনপির প্রকাশ্য সঙ্গী হলেও গোপনে আওয়ামী লীগেও তারা ঢুকে যাচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। বিশেষ করে জামায়াত যদি ক্ষমতার অংশীদার হয়। সেটা নিশ্চয়ই আমরা চাই নাÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সিপিবির সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হায়দার আকবর খান রনো।
তিনি বলেন, আমরা তো বিএনপির রাজনীতি দেখেছি। রাজনীতিতে পরির্তন আনতে পারেনি তারা। এবার যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে হয়তো আরও প্রতিহিংসামূলক হয়ে উঠবে। প্রতিহিংসামূলক আচরণ করুক আর না করুকÑ তাদের সঙ্গে তো জামায়াতে ইসলামী রয়েছে। জামায়াতের এতগুলো লোকের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে আদালতের বিচারের মাধ্যমে, তারা তো প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রতিশোধ নিবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের অনেক সমালোচনা আমরা করি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ। অভিনন্দন জানাই। কারণ তিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। অনেক ঝুঁকি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিচারের কাজটি তিনি করতে পেরেছেন। এটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হায়দার আকবর খান রনো বলেন, এখন তো দেশে কোনো রাজনীতি নেই। যা আছে একতরফা রাজনীতি। সরকার চাইলেই কেবল অন্যরা রাজনীতি করতে পারবে, না চাইলে পারবে না। এই একতরফার মধ্যেও তারা নিজেরাই অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বা পরে যে আগুন, পেট্রলবোমা মেরে মানুষ, দেশের ক্ষতি হয়েছিল তা এখন তো আর এখন হচ্ছে না। দুই দলের মধ্যেও আর এখন মারামারি হচ্ছে না। ছাত্রলীগ-যুবলীগ এখন নিজেরাই মারামরি, খুনোখুনি করছে। মায়ের পেটের বাচ্চাও গুলিবিদ্ধ হয়।
তিনি বলেন, এখন প্রায় সব জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। চাল, ডাল, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হতো। তাছাড়া বাড়ছে গুম, খুনের মতো ঘটনা। আছে রামপালের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটা একটা জাতীয় ইস্যু। রামপালের প্রকল্পে কী কী ক্ষতি হতে পারে সুন্দরবনের তা নিয়ে বিশেষজ্ঞসহ সবাই কথা বলছেন। যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কিন্তু কোনোকিছুই মানতে রাজি নয় সরকার। কারও কথা শুনতেও রাজি নয়। রামপাল প্রকল্প অন্য জায়গায় সরিয়ে নিলে কী এমন ক্ষতি হবে। যে প্রকল্পের বিরুদ্ধে সবার এত আপত্তি, সে জায়গায় সরকারের অনঢ় অবস্থান জিদ ছাড়া আর কীই-বা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ড. কামাল, হোসেন, বি. চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রবের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের কোনো চিন্তাভাবনা আপাতত আমাদের নেই। সে ধরনের কোনো সম্ভাবনাও দেখছি না আমি। তবে বামদলগুলো সঙ্গে নিয়ে জোট হতে পারে। এ জোটে প্রগতিশীল, উদারনৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা আসতে পারেন। আমরা চাই এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় একটা গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল সরকার থাকুক। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হোক। যারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিবে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে কাজ করবে।