৩২তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল পর্বের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ ৩২তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল প্রথম কনক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করবেন। এজন্য নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এরমধ্য দিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্রটির মূল পর্বের অর্থাৎ পরমাণু চুল্লি বসানোর কাজ (ফাস্ট কংক্রিট পোরিং ডেট বা এফসিডি) শুরু হবে। এর আগে রূপপুরে আবাসন ছাড়াও অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনে আসবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর দ্বিতীয় ইউনিট আসবে পরের বছর। সম্প্রতি বাাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) চেয়ারম্যান ড. দিলীপ কুমার সাহার কাছে প্রকল্পর নকশা ও নির্মাণ লাইসেন্স হস্তান্তর করেন বিএইআরএ’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সম্মতি পাওয়ার পর এ লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের জুনে কেন্দ্রটির নির্মাণস্থল উপযোগী ও নিরাপদ বলে সাইট লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রকল্প পাবনার রূপপুরে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ঋণ নিচ্ছে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। তবে এ জন্য সুদে-আসলে রাশিয়াকে ফেরত দিতে হবে ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ৯১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার শুধু সুদ বাবদই সরকারকে ফেরত দিতে হবে ৬৯ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোসাটম এর মহাপরিচালক আলেক্স লিখাচেভ উপস্থিত থাকবেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে সরকার ২০১১ সালে চুক্তি করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ঋণ চুক্তি সই হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ধাপের কাজ এরমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন মূল নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ের কাজের এখন পর্যন্ত চারটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নানা ধরনের সমীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্মাণ করা অবকাঠামোর মধ্যে কনক্রিট মিক্সিং এর দুটো ইউনিট ছাড়াও অ্যামিনিটি বিল্ডিং, ক্যান্টিন, ওয়ার্কশপ, মালামাল উঠা-নামার জন্য নদী তীরবর্তি স্থাপনা, বহিঃ স্থাপনা সংরক্ষণাগার, কনক্রিট মিক্সিং ট্যাংক ও গাড়ি ধৌতকরণ এলাকা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় দুটি ২০তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আরও এমন ১৯টি ভবনের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য রেল এবং নৌপথ উন্নয়ন করতে হবে। মংলা বা চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসারি রেলযোগাযোগ এবং নৌপথ খনন করতে হবে।
রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তিতে ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর পরিবারের সর্বশেষ সংস্করণ স্থাপণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কেন্দ্রটিতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে। কেন্দ্রটির স্পেন্ট ফুয়েল বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরুতে উদ্বেগ থাকলে শেষ পর্যন্ত সরকার রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি করেছে এই চুক্তির আওতায় কেন্দ্রটির সব বর্জ্য রাশিয়া ফেরত নেবে।
১৯৬১ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২-১৯৬৮ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার পদ্মা পাড়ে রূপপুরকে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তখন কেন্দ্রটির জন্য ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্ট হাউজ, বৈদ্যুতিক সাব- ষ্টেশন ও কিছু আবাসিক ইউনিটের নির্মাণ কাজ আংশিক শেষ করা হয়। শুরুতে ২০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার তা বাতিল করে দেয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যদিও পরবর্তীতে বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু