রাজনৈতিক দলের বিকল্প নেতৃত্ব কোথায়?
আমাদের সমাজ পরিবর্তনে ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ভাবে এগিয়ে চলেছে আমাদের রাজনীতি। রাজা-বাদশা, জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করে প্রতিটি মানুষের মনের মাঝে এঁকে দেওয়া হয়েছে রাজনীতি। শাসন ব্যবস্থায় যদি কোনো দল হিংস্র হয়ে উঠে, জনগণের মালিকানায় রাষ্ট্র ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তবে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন করবে জনগণ। জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। মালিক তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দিবেন, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা জনগণের। জনগণের একটি অংশ জনপ্রতিনিধিত্ব করার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করে নেয়। সেই দলের একজন নেতা নির্বাচিত করা হয় দলীয় সদস্যদের ভোটে। রাজনীতিকে বলা হয় ঐক্যের প্রতীক। সারা দুনিয়ার রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের কি হয়েছে জানা নেই, তবে বাংলাদেশের বাঙালির ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। সাত কোটি বাঙালির একটি কথা- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম- ৭ মার্চের ভাষণ কাঁপিয়ে তুলেছিল বাংলার আকাশ বাতাস। রাজনীতির সুফল অর্জন করেছিলাম ৯ মাসে, একজন মুজিব ছিল বলে। প্রশ্ন হল, একক নেতৃত্ব ছিল জাতির জনকের, জনপ্রিয়তায় তার সমতুল্য কেউ ছিল না। উপমহাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একক নেতৃত্ব, যার মাসুল দিতে হয় দেশের জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের। বৃটিশ শাসন থেকে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর আততায়ির গুলিতে জীবনাবসান হওয়ার পর ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় নেতৃত্বের জন্য, সেকেন্ডম্যান না থাকার জন্য। পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ভাবে পিপলস পার্টি গড়ে উঠেছিল, জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি হওয়ার পরে। দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বেনজির ভূট্টোকে নেতৃত্বে আসতে হয়েছে। উপমহাদেশে সামরিক শাসকরা বার বার ক্ষমতা গ্রহণ করে দল বানিয়েছে। জিয়াউল হক, পারভেজ মোশাররফ, এরশাদ, জিয়াউর রহমান, আবার হারিয়েও গেছে। সামরিক শাসকরা কখনোই স্থায়ী দায়িত্ব পায়নি। জোর করে ক্ষমতায় আসা যায় কিন্তু জনগণ গ্রহণ না করলে, চাপিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। খন্দকার মোশতাক, আবু সায়েমসহ হাজারো উদাহরণ ইতিহাসে আছে। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর উপযুক্ত নেতৃত্ব না থাকায় বাঙালি মাসুল দিয়েছে চরমভাবে। ১৫ আগস্টের হত্যার সাথে অনেকেই জড়িত ছিলেন, অনেকে নিরব ছিলেন, অনেকে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন। জীবন দিয়ে প্রমাণ রেখেছেন ৪ জাতীয় নেতাসহ অনেকেই। ঘাতকরা জানতেন মজিবের রক্ত বুলেট ছাড়া প্রতিরোধ করা যাবে না, যে কারণে শেখ রাসেলকেও ওরা ক্ষমা করেনি। বাঙালির রক্তে স্বাধীনতার যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল মুজিব, তা থামানোর শক্তি হায়েনাদের ছিল না, আজও কেউ অর্জন করতে পারেননি এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না। আওয়ামী লীগকে হারাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। ’৯১ এর নির্বাচনে হাজারো উদাহরণ আছে, ৫০০ ভোটে নৌকা হেরেছে, ২০০০, ৩০০০ ভোট গায়ে মানে না আপনি মোড়লরা পেয়েছে। নিজেও শেষ হয়েছে দলকেও পরাজিত করেছে। জাতির জনককে হারিয়ে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার নির্যাতন মনে হয় অনেকেই ভুলে গেছেন। শেখ হাসিনার উদারতা, জাতির জনকের অঙ্গিকার বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তবে এই সমস্ত বীর পুরুষরা কোথায় থাকতেন, কোথায় ছিলেন অনেক কিছু দেখার দূর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য যাই বলুন না কেন আমার হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ২১ বার হামলা থেকে নেত্রীকে জীবন দান করেছে বলেই না বীর পুরুষরা নিজের অহংকার দেখাতে পারেন, রাগ করে নৌকা হারাতে ব্যস্ত হয়ে পরেন, অবৈধ টাকা আছে বলে। বাংলাকে উন্নয়নের রোল মডেল থেকে থামানো যাবে না। ষড়যন্ত্র অনেক হচ্ছে হবে, আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ