বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্কুল পর্যায়ে রাজনীতি
ওয়াসিম ফারুক : আমাদের দেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে রাজনীতির অবস্থা খুব সুখকর নয়। রাজনীতি আজ কি আর রাজনীতিবীদদের হাতে আছে? এমন প্রশ্ন প্রায় সবার মনেই, কেউ প্রকাশ করছেন, কেউ করছেন না। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি ঘোষণা দেশের সচেতন মহলকে বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এই নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রত্যেক মাধ্যমিক স্কুলে কমিটি গঠন করতে সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এমন নির্দেশ আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টির কারণ। অনেকেই একে জাতির জন্য অশনি সংকেত বলেও আখ্যায়িত করেছেন। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের যেন ছাত্র রাজনীতি ছুঁতে না পারে, এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০ -এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামেই অসামান্য ভূমিকা রয়েছে, যার একটি অংশের দাবিদার স্কুলগামী ছাত্ররা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অনেক স্কুল ছাত্রের অংশগ্রহণসহ আত্মত্যাগের ইতিহাস আমাদের জানা। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর কথা। বৃটিশদের বিরোধিতা করেছিলেন বলে হাসতে হাসতে ফাঁসির কাষ্ঠে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়েছিল বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান ও রাজনীতিতে জরিয়েছিলেন স্কুল জীবনেই। কালের বিবর্তনে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্কুলগামী কোমল শিশুদের রাজনীতিতে জড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেটাই ভাববার বিষয়? ছাত্র রাজনীতির নামে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, আধিপত্যের সংঘর্ষ, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, হলের সিট নিয়ন্ত্রণসহ ছাত্রনেতাদের নানা অপকর্মে দেশের মানুষ অতীষ্ঠ। ২০০৯ সাল থেকে গত ৮ বছর ১০ মাসে শুধু ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন। টেন্ডার, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে দেশের অন্তত ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ ছিল। শুধু ছাত্রলীগ নয় আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের একই অবস্থা।
লেখক : কলামিস্ট/সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ