রোহিঙ্গা সমঝোতা : চায়না প্লানের নিকট ব্যর্থ ভারতের কূটনীতি
গোলাম মোর্তোজা : বাংলাদেশের প্রতিবেশি এবং বন্ধু দেশ ভারতের হাতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের যে সুযোগ ছিল ভারত সেই সুযোগটা নষ্ট করেছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারত যে ভূমিকা রাখতে পারতো, সেই ভূমিকা ভারত রাখেনি। কিন্তু ঠিক সেই জায়গাটাতে চীন উদ্যোগ নিয়ে ভূমিকা রেখে রোহিঙ্গা সংকটে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। যেটাকে বলা হচ্ছে চায়না প্লান। অর্থাৎ বলা যায়, কূটনীতির এই জায়গাটাতে বা আঞ্চলিক কূটনীতিতে ভারত একধরনের ব্যর্থ হয়েছে, চায়না সফল হয়েছে। এবিষয়টি সদ্য সম্পাদিত চুক্তি সংক্রান্ত। কিন্তু প্রশ্ন আ,েছ বাংলাদেশ কেনো এই সমঝোতা দলিলে স্বাক্ষর করলো? এবং এই সমঝোতা দলিলে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারবে কি পারবে না?
এবার আসা যাক রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত কেনো ফেল করেছে? রোহিঙ্গা সংকটের একদম প্রথম পর্যায়ে বালাদেশ ভারতের পথ চেয়ে বসে ছিল। তারপরেও ভারত কেনো ব্যর্থ হয়েছে, তার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমতঃ ভারত একধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। মিয়ানমারকেও হাতে রাখবে, বাংলাদেশকেও হাতে রাখবে। সংকট সমাধানে ভারত কি ভূমিকা রাখবে? তাদের কি কি করা দরকার? কি পদ্ধতিতে এগোবে? তাদের ক্ষমতা কতোখানি? এই জায়গাটাতে ভারত তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আর ভারত কেনো তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সেই ক্ষেত্রে ভারতের যথেষ্ট যুক্তি আছে। সেই সাথে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ভারত পরিষ্কার করে জানে। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাম্মপন্ন দেশ নয়। দ্বিতীয়তঃ মিয়ানমার রাষ্ট্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সেনাবাহিনী। এককথায়, মিয়ানমারের সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে সেনাবাহিনী। আর ভারতের যোগাযোগ হচ্ছে মূলত মিয়ানমারের গনতান্ত্রিক অংশ অর্থাৎ অং সান সু চির সঙ্গে। মিয়ানমারের মূল শক্তির উৎস সেনাবাহিনীর সাথে গনতান্ত্রিক ভারতের যোগাযোগ বা আন্তরিকতা তুলনামুলকভাবে কম। সেই জায়গায় দাড়িয়ে ভারত যদি আন্তরিক উদ্যোগ নিয়ে মিয়ানমার বা বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে যদি কোনো চুক্তি করতে চাইতো এবং সেই চুক্তি যদি চায়না সম্মতি না দিতো, তাহলে সেই চুক্তি সম্পন্ন করা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন অথবা অসম্ভব ছিল। ভারত এক্ষেত্রে সফল হতে পারতো না। যেহেতু ভারত বুঝেছে তার পক্ষে উদ্যোগ নিয়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো দেশকেই সে খুশি করতে পারবে না, সে কারনেই ভারত উদ্যোগ নেয়নি। এখন চায়নার কথায় আসি। চায়না কেনো এই উদ্যোগটা নিলো? চায়না উদ্যোগ নেওয়ার পিছনে কারণ- অং সান সু চির চেয়েও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে চায়নার খুব ভাল সম্পর্ক। আর মিয়ানমারের ক্ষমতার মূল কেন্দ্র তাদের সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর সাথে চায়নার শুধু ভালো সম্পর্কই নয় বরং মিয়ানমারের সেনাবহিনীর উপর চায়না একক প্রভাব এবং আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অপরদিকে বাংলাদেশের সাথেও চায়নার ভালো সম্পর্ক। চায়নার বাংলাদেশে যেমন বড় একটা আর্থিক বিনিয়োগ রয়েছে, অপরদিকে মিয়ানমারে তার চেয়ে অনেকগুন বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এরকম সবকিছুর বাস্তবিক একটা হিসাব-নিকাশের উপর ভিত্তি করেই চীন উদ্যোগটা নিয়েছিল এবং ভারতের কূটনীতিকে পিছনে ফেলে চীন সফল হয়েছে।
পরিচিতি : সম্পাদক, সাপ্তাহিক
মতামত গ্রহন : লিয়ন মীর
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ