‘২০১৮-এর আগে বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে না’
এস এম নূর মোহাম্মদ : ১০ নভেম্বর পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এরপর থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কথা উঠলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দায়িত্বে থাকা বর্তমান প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনে বাধা নেই। আইনমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা প্রধান বিচারপতি সব দায়িত্বই পালন করতে পারবে। এমনকী এর আগে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দিলে তাদের শপথ পড়ানো নিয়েও ঝামেলা নেই। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারিপতি যা করতেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তা করতে কোনো বাধা নেই। তবে রাষ্ট্রপতি এই পদ বেশি দিন খালি রাখবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ বসলেও বর্তমানে বিচারক সংকটের কারণে কেবল একটি বেঞ্চ বসতে হচ্ছে। বর্তমানে আপিল বিভাগ-৩ নামে আরও একটি এজলাস তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিচারক সংকটের কারণে ওই এজলাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে সেখানে চেম্বার বিচারপতি বসে বিচার কাজ করেন। এদিকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছর। সেই অনুযায়ী বেশ কয়েকটি এজলাসও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ না হওয়ায় এসব এজলাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি রয়েছেন ৫ জন আর হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন ৮৭ জন। যদিও আপিল বিভাগে এর আগে সর্বোচ্চ ১১ জন বিচারপতি বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এছাড়া বর্তমানে ৩ জন বিচারপতি কাজ করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বিচারক সংকট রয়েছে নিম্ন আদালতেও।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার ১০ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। তাদের মধ্যে গত ডিসেম্বরে একজন মারা যান। আর একজনকে বাদ দিয়ে বাকি ৮ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয় সরকার। বর্তমানে স্থায়ী নিয়োগ না পাওয়া দুই বিচারপতির রিট আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে। ২০১৫ সালের পর গত আড়াই বছরেও উচ্চ আদালতে আর কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও গত বছরের আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য ৮ জনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিচার বিভাগীয় সম্মেলন। যেখানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আর সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন দায়িত্বে থাকা প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করা সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করা হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি। সেখানে রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে এ বছর প্রধান বিচারপতি এমনকি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগেও কোনো বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। আর অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই বিষয়েরই ইঙ্গিত রয়েছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী