মুহাম্মদের যে কথায় বিস্মিত আরব নেতারা!
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
সীরাতে রাসুল সা. পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যেতে হয়। ঘোর লাগা চোখে নেমে আসে অশ্রু। প্রেমময় রাসুল আমার কত দয়াময়। রাসুল আমার কত মায়াময়। কত ধৈর্য আল্লাহ দিয়েছেন। কত দৃঢ়তার পাহাড় ছিলেন তিনি। প্রতিটি ঘটনাই জীবন চলার পাথেয় উম্মতের। উম্মতের দরদে কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে আমার নবীকে। লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তিনি। একদিনের ঘটনা, বিশিষ্ট কুরাইশ সরদার উতবা ইবনে রাবীআ কুরাইশদের দরবারে বসা। রাসুল সা. একাকী বসেছিলেন মসজিদে হারামে। উতবা বললো, হে কুরাইশগণ, আমি মুহাম্মাদের কাছে কিছু প্রস্তাব রাখবো। হয়তো সে প্রস্তাব মেনে নিয়ে ইসলাম প্রচার বন্ধ করবে। তোমরা কী মনে কর? এ সময়ে হামযা রা: ইসলাম গ্রহণ করায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করেছে। তাই সকলে বললো, খুব ভালো প্রস্তাব।
উতবা রাসুল সা. এর কাছে গিয়ে বললো, ভাতিজা তুমি আমাদের মধ্যে কতখানি সম্ভ্রান্ত, বংশমর্যাদা সম্পন্ন তা তুমি জানো। তোমার দাওয়াত জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি করছে। তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের হেয় প্রতিপন্ন করছ। আমার কথা শোনো! তোমার কাছে কয়েকটা বিকল্প প্রস্তাব রাখছি। রাসুল (সা) বললেন, বেশ, বলুন। তিনি বললেন ভাতিজা, তুমি দাওয়াতের মাধ্যমে যদি বিপুল সম্পদ লাভ করার ইচ্ছা হয়ে থাকে, আমরা অর্থ সংগ্রহ করে তোমাকে আমাদের মাঝে সবচেয়ে বিত্তশালী বানিয়ে দেবো। আর যদি পদমর্যাদা লাভ করতে চাও, আমরা তোমাকে এ দেশের রাজা বানিয়ে দেবো। আর যদি তোমার কাছে জ্বিন আসে, তাকে তুমি হটাতে পারছ না, তাহলে আমরা তোমার চিকিৎসা করাবো। যত টাকা লাগুক তোমাকে সুস্থ করে তুলবো। অনেক সময় জ্বিন মানুষের ওপর পরাক্রান্ত হয়ে থাকে, তাকে তাড়ানোর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
রাসুল সা.মনোযোগ সহকারে কথা শুনছিলেন উতবার। শেষ হলে তিনি বললেন, “হে আবুল ওয়ালীদ, আপনার কথা কি শেষ হয়েছে? হাঁ তিনি বললেন, তাহলে আমার কিছু কথা শুনুন। রাসুল সা.সুরা হামীম সাজদা তিলাওয়াত করা শুরু করলেন। হা-মীম! এটা পরমত করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া কিতাব। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত কিতাব কুরআন। এর আয়াতগুলোকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, জ্ঞানী লোকদের জন্য। সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী হিসেবে তা এসেছে। কিস্তু তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; তারা শুনতে চায় না। তারা বলে, তুমি যে বিষয়ের দিকে আমাদের আহ্বান করছো, আমাদের মন তা থেকে পর্দার আড়ালে রয়েছে।”উতবা স্তব্ধ হয়ে খুবই মনোযোগের সাথে শুনছিলো। রাসুল সা.তিলাওয়াত করতে করতে সিজদার আয়াতে গিয়ে থামলেন, সিজদা করলেন। আয়াতটি হলো ‘এই দিন ও রাত,সূর্য ও চন্দ্র এ সবই আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না। একমাত্র আল্লাহকে সিজদা কর,যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন যদি একমাত্র তাঁর ইবাদাত করতে প্রস্তুত থেকে থাক।’ (আয়াত-২৫) এরপর বললেন, “যা শুনাবার তা তো শুনলেন। এখন যা করণীয় মনে করেন করুন।”
ফিরে গিয়ে উতবা বললো, “আমি এমন বাণী শুনেছি যা আর কখনো শুনিনি। হে কুরাইশগণ, সত্যিই তা কবিতাও নয়, কোন জ্যোতিষীর কথাও নয়। আমার কথা শোনো, এই ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। মুহাম্মাদ যা করতে চায় করতে দাও। তার সাথে কোন সংশ্রব রেখো না। আমি নিশ্চিত, মুহাম্মাদ যে কথা প্রচারে নিয়োজিত, ভবিষ্যতে বিরাট আলোড়ন তুলবে। যদি সে আরবদের ওপর জয়যুক্ত হয় তাহলে তার রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব হবে। তার মর্যাদা তোমাদেরই মর্যাদার কারণ হবে। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যবান জনগোষ্ঠী হবে তোমরা। উতবার কথা শুনে কাফেররা বলল “মুহাম্মাদ এবার তোমাকে যাদু করেছে।” উতবা বললো, এটা আমার অভিমত। এখন তোমরা যা ভাল বুঝ কর।” (সীরাতে ইবনে হিশাম)