চারিত্রিক সৌন্দর্যে মহানবী (সা.)
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
আল্লাহপাক নবী (সা.) কে অনুপম চরিত্র মাধুরী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। চারিত্রিক সৌন্দর্যে তিনি ছিলেন সকল সৃষ্টির সেরা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক তার চরিত্রের প্রশংসা করে ইরশাদ করেছেন: নিসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল কালাম : ৪)
এ আয়াতটির দুটি অর্থ। একটি হলো, নবী (সা.) ছিলেন নৈতিক চরিত্রের সর্বোচ্চ মানের ওপর অধিষ্ঠিত। তাই তিনি আল্লাহর বান্দাদের হিদায়াতের কাজে এতো দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করেছেন। একজন দুর্বল নৈতিক চরিত্রের মানুষ এ কাজ করতে সক্ষম হতো না। অন্যটি হলো, কাফেররা নবী (সা.) এর প্রতি পাগল হওয়ার যে অপবাদ আরোপ করেছে তা মিথ্যা হওয়ার আরেকটি সুষ্পষ্ট প্রমাণ তার উন্নত নৈতিক চরিত্র। কারণ উন্নত নৈতিক চরিত্র ও মস্তিস্ক বিকৃতি একসাথে একই ব্যক্তির মধ্যে থাকতে পারে না। যার বুদ্ধি-বিবেক ও চিন্তার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে এবং মেজাজে সমতা নেই সেই পাগল। পক্ষান্তরে মানুষের উন্নত নৈতিক চরিত্র প্রমাণ করে যে, তার মস্তিষ্ক ও বিবেক-বুদ্ধি ঠিক আছে এবং সে সুস্থ ও স্বাভাবিক। তার মন-মানস ও মেজাজ অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়েছেন হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, কুরআনই ছিলো তার চরিত্র। ইমাম আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, দারেমী ও ইবনে জারীর সামান্য কিছু শাব্দিক তারতাম্যসহ তার এ বাণীটি বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। এর মানে, রসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার সামনে শুধু কুরআনের শিক্ষাই পেশ করেননি। বরং তিনি নিজেকে তার জীবন্ত নমুনা হিসেবে পেশ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কুরআনে যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে সবার আগে তিনি নিজে সে মোতাবেক কাজ করেছেন। এতে যেসব বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে তিনি নিজে তা সবার আগে বর্জন করেছেন। কুরআন মজীদে যে নৈতিক গুণাবলীকে মর্যাদার কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেসব গুণে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে বেশী গুণান্বিত। আর কুরআনে যেসব বিষয়কে অপছন্দনীয় আখ্যায়িত করা হয়েছে তিনি নিজে ছিলেন তা থেকে সবচেয়ে বেশী মুক্ত। আরেকটি বর্ণনায় হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সা.) কখনো কোন খাদেমকে মারেননি, কোন নারীর গায়ে হাতে তোলেননি, জিহাদের ক্ষেত্র ছাড়া নিজ হাতে কখনো কাউকে হত্যা করেননি। তাকে কেউ কষ্ট দিয়ে থাকলে তিনি কখনো তার প্রতিশোধ নেননি। কেবল আল্লাহর হারাম করা বিষয়ে সীমালংঘন করলে তিনি তার শাস্তি দিয়েছেন। তার নীতি ছিলো, কোন দুটি বিষয়ের একটি গ্রহণ করতে হলে তা যদি গোনাহের কাজ না হতো তাহলে তিনি সহজতর বিষয়টি গ্রহণ করতেন। গোনাহের কাজ থেকে তিনি সবচেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। (মুসনাদে আহমাদ)
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি দশ বছর যাবত রসূলুল্লাহ (সা.) এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। আমার কোন কাজ সম্পর্কে তিনি কখনো উহ! শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমার কোন কাজ দেখে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে কেন? কিংবা কাজ না করলে কখনো বলেননি, তুমি এ কাজ করলে না কেন? (বুখারী ও মুসলিম)
মোটকথা, মহানবী (সা.) তুলনাহীন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ ছিলেন। মহান রাব্বুল আলামিন তাকে অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন। আল্লাহ পাক তার প্রিয় নবীর সম্মানে বলেছেন, ইন্নাকা লা আলা খুলুকিন আযীম’, অর্থাৎ নিঃসন্দেহে আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’। এটি এমন তুলনাবিহীন গুণ যার কারণে মানুষ তার প্রতি ছুটে আসত। তার প্রতি মানুষের মনে ভালোবাসা ছিল বদ্ধমূল। মানবীয় গুণাবলীর সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যের কারণে তার স্বজাতির রুক্ষতা পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকেও এমন সুন্দর নৈতিক চরিত্র দান করুন। আমীন।