বিশ্বনবীর সমাজ বদলের বিপ্লব
মাহমুদুল হক জালীস
বর্তমানে পৃথিবীর চারদিকে ঘোর অন্ধকার বিরাজ করছে । ইথারে ইথারে ধ্বনিত হচ্ছে অসহায় -নির্যাতিত মুসলমানের আর্তচিৎকার। মুসলিম মা-বোনের খুনে সিঞ্চিত হচ্ছে ধরিত্রির উষ্ণভূমি । প্রতিদিনের চন্দ্র সূর্য সাক্ষী হচ্ছে পৃথিবীর বুকে ঘটিত নানা অন্যায় অবিচারের। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানের কর্তব্য মহান আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী জীবন গঠন করা। আর তার পদ্ধতি হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ সা.এর জীবনাদর্শের ভিত্তিতে জীবন
পরিচালনা করা। রাসুল্লাহ সা.এর আদর্শ মুতাবেক জীবন-যাপন করার অর্থ হলো ব্যক্তি ও পরিবার থেকে সমাজিক ও জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরে তথা সমগ্র মানবজীবনে ইসলামের বিধানকে বাস্তবায়িত করা। হযরত মুহাম্মদ সা.জাহেলী যুগের অধঃপতিত সমাজ ব্যবস্থাকে যে সমস্ত শাশ্বত কর্মসূচীর মাধ্যমে পরিবর্তন করে ছিলো নিন্মে সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হলো, জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, মানুষ নিজ সত্ত্বা সম্পর্কে প্রায়শ ভুল ধারণা পোষণ করে। কেউ নিজেকে মনে করে সর্বক্ষমতার অধিকারী। আবার কেউ নিজেকে সামান্য গাছ-পালা, পশু-পাখির চেয়েও তুচ্ছ মনে করে। হযরত মুহম্মদ সা. সেইসব ভুল ধারণা নিরসন করে, মানুষের জীবনের ব্যস্ততা ও সার্থকতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলেন । সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা: জীবন সম্পর্কে ধারণায় ত্রুটি থাকায় মানুষের মাঝে সাম্যও ভ্রাতৃত্ববোধ বলতে কিছুই ছিলো নাএ। যার ফলশ্রুতিতে এক গোত্রে আর এক গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশে সদা সচেষ্ট থাকতো। হযরত মুহাম্মদ সা.পৃথিবীতে আগমন করে তাদের এই ধারণায় কুঠারাঘাত করেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন – মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই । আরবের উপর অনারবের, অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সমাজিক সম্পর্ক গঠন: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে পারেনা । ব্যক্তিও সমাজের সমন্বয়ের মধ্যে মানবকল্যাণ নিহিত। তাই আল্লাহর নবী সা.মানুষকে সামাজিক হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন ‘খাঁটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে’ (সহীহ বুখারী) অর্থ-সম্পদের ব্যবহার: নবী করিম সা.সমাজের অর্থ-সম্পদের সুষম ব্যবহার ও সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি আল্লাহর প্রদত্ত যাকাত ও সাদাকাহের বিধানকে বাস্তবায়িত করে ধনীর মালে গরীবের অধিকার প্রতিষ্টিত করেছেন। শ্রমিকের যথাযথা মূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেছেন, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাদের মজুরী পরিশোধ কর। (সুনানে বাইহাকী)
মানবতাবোধ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠ: প্রিয় নবী সা.ছিলেন মানবতার আধার। তিনি কাফেরদের অত্যাচার সহ্য করে যে, মহানুভবতার প্রদর্শন করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল । এমনিভাবে হযরত মুহাম্মদ সা.সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে তোমরা যখন বিচার করো, তখন ন্যায়সঙ্গত ভাবে কর। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার: প্রকৃত পক্ষে শিক্ষাই হলো আলো, আর অজ্ঞতা হচ্ছে আঁধার। রাসূল সা.পৃথিবীতে অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করেছেন। মানুষকে জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিয়ে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ । (সহীহ বুখারী) হযরত মুহম্মদ সা. বৈচিত্র্যময় এই জীবনজগতের বহুরৈখিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত সমাজকে পরিবর্তন করে আলোর মুখ দেখিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন বিশ্বব্যাপী আদর্শ সমাজ । মহানবী সা. এর সেইসব কর্মপন্থা অবলম্বন করেই বর্তমান অধঃপতিত সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করেই পৃথিবীর মানুষ সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে।