মেয়র আনিসুল হক : শুধু স্বপ্ন নয় একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন
ডা. জাকির হোসেন
চলে গেলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ঢাকা উত্তর সিটির নগর পিতা আনিসুল হক। তার জীবন বর্ণাঢ্য এই জন্য যে, কর্মজীবনের একেবারে শুরু দিকে উপস্থাপক হিসেবে তৎকালীন দাপুটে সব টিভি উপস্থাপকের সাথে সমান কাতারে নিজের নাম লিখাতে তিনি সমর্থ হন। এরপর তার ব্যবসায়িক জীবনেও ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সফল। সবর্শেষ রাজনীতির খাতায় নিজের নাম লিখিয়েও তিনি ছিলেন আধুনিক ঢাকার স্বপ্নদ্রষ্টা। ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর ঢাকার সমস্যার অন্ত ছিল না। অভিভাবকশূন্য ঢাকার একাংশের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঠিক সময়ে আর্বিভাব ঘটে মেয়র আনিসুল হকের। নগরপিতার অভাবে যখন দিন দিন ঢাকায় বসবাসকারী নগরবাসীর দুর্ভোগ আর ভোগান্তির পরিমাণ বাড়ছিল। দুর্ভোগের নগরীর হাল ধরতে রাজনীতির মাঠে আচমকা আবির্ভাব ঘটল এক স্বপ্ন সারথীর। হাসিমুখে এক দিশেহারা নগরীর দিকনির্দেশনা দিতে সকল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে তিনি ঢাকাবাসীকে অজ¯্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার প্রতিশ্রুতি শুনে অনেকে বলেছিলেন, এগুলো শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর নিন্দুকের সকল সমালোচনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে এক এক করে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তিনি সকলের চোখে তাক লাগিয়ে দেন। তেজগাওঁ ষ্টেশনকে তিনি অবৈধ দখলমুক্ত করে রাস্তা তৈরি করেন। ঢাকার সকল ফুটাপাতগুলোকে আধুনিক মান সম্পন্ন করে তৈরি করার জন্য তিনি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়নে বহুদূর অগ্রসর হয়ে যান। আগারগাঁ এলাকায় খালের উপর গড়ে উঠা বস্তি উচ্ছেদ করে তিনি সেখানে খাল পুনরুদ্ধার করেন এবং ভবিষ্যতে যাতে কেউ আবার রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে দখল করতে না পারে সেজন্য খালের দু’পাশে ঢালাই করে বাউন্ডারি তৈরি করে দেন। ক্লিন ঢাকা উপহার দিতে গিয়ে তিনিঁ বর্জ্য ব্যপস্থাপনায় আমূল পরিবতর্ন করেন। তিনি প্রতিটি এলাকায় আধুনিক মানের ছোট ছোট বর্জ্য অপসারণ ষ্টেশন তৈরি করেন, সেখান থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাতের বেলায় সকল বর্জ্য অপসারণ করার প্রক্রিয়া চালু করেন। মাত্র দু’বছরে তিনি তার প্রতিশ্রুত সকল কর্মকে বাস্তবে রূপদানের জন্য অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় গন্তব্যে পৌছার কাছে গিয়েও তিনি যেতে পারলেন না। এই বছরের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে তিনি লন্ডন সফরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই তিনি এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাঝখানে তারঁ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পরে ৩১ ই অক্টোবর আইসিইউ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় । কিন্তু নভেম্বর মাসের শেষের দিকে তার শারীরিক অবস্থার আবার অবণতি হতে থাকলে তাকে পুনরায় আইসিইউ তে স্থানান্তর করা হয়। ৩০ নভেম্বর অসংখ্য গুনগ্রাহী আতœীয় স্বজন আর পরিবারের সদ্স্যকে কাদিঁয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বতমার্নকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই মেয়র। তার মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পত্রিকাগুলো তার কর্মময় জীবন নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী খবর প্রচার করছে। অনেকে তাকে আধুনিক ঢাকার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একটি কঠিন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তা হলো, আজকাল রাজনীতির ময়দানে রাজনীতিবিদরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়নে নানা অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর সাধারণ জনগণকে যেভাবে ভোগান্তির মধ্যে ফেলেন, সেই সকল অজুহাতকে আনিসুল হক মিথ্যে প্রমাণ করে দেখিয়ে গেছেন সদিচ্ছা থাকলে অল্প দিনেই উন্নয়ন সম্ভব, মানুষের ভোগান্তি দূর করা সম্ভব। যেখানেই থাকুন আপনি মানুষের ভালবাসা আর দোয়া নিয়ে ভাল থাকুন। আপনার বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করছি।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ