চুক্তি হয়েছে, তাহলে ভাসানচর কেনো? গোলাম মোর্তোজা
গত ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছে, সেই চুক্তি অনুযায়ি স্বাক্ষরিত সময় সীমা থেকে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে বা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সেই সাথে বাংলাদেশ মৌখিকভাবে বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে একটি কমিটি করা হবে, সেই কমিটি কাজ করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে। এই জায়গাটাতে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। মোটা দাগের কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। বাংলাদেশ আসলে এই কথাটি বিশ্বাস করে কি না? বাংলাদেশ সত্যি সত্যি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় কি-না? এমন ধরনের চিন্তার কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশ যখন সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাচ্ছে আবার ঠিক একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার একটা প্রকল্প পাস করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসনের জন্য, তখন প্রশ্ন উঠেছে। যদি সমঝোতা স্বারক অনুযায়ি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চুক্তি হয়, বাংলাদেশ যদি বিশ্বাস করে এই সমঝোতার আলোকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে, তাহলে এই আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কোনো? রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসনের প্রসঙ্গ আসছে কেনো? আসল কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আমরা দেখাচ্ছি যে, রোহিঙ্গাদের আমরা পূনর্বাসন করছি। যা বাংলাদেশের জন্য আতœঘাতি হবে। রোহিঙ্গাদের যেহেতু ফেরত পাঠানোর চুক্তি হয়েছে তাহলে রোহিঙ্গারা বর্তমানে যেখানে আছে অস্থায়ীভাবে সেখানেই তাদের রাখা হোক। বাংলাদেশ কোনো রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসনের জন্য ভাসানচরে নিয়ে যাবে? এই পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বড় রকমের প্রশ্ন সামনে এসেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসা পেয়েছে। এই প্রশংসার মধ্যেই বাংলাদেশ সীমাবদ্ধ থাকতে চায় কি না? সরকার রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তর্ক করবে, আলোচনা করবে যার মধ্য দিয়ে পুরো পৃথিবী দেখবে যে, বাংলাদেশ দশ-পনেরো লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে খুব বড় মানবিক কাজ করেছে। এক্ষেত্রে সরকার প্রশংসিত এবং লাভবান হবে কিন্তু বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন বাংলাদেশের সরকার কি চাইছে সে বিষয়টা নিয়ে বড় রকমের একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ আসলেই কি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়, নাকি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চায়? জনগনকে এধরনের ধোয়াসার মধ্যে না রেখে সরকারের সচ্ছ অবস্থান প্রকাশ করা উচিত ।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর /সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ