সবকিছু আদালতের মাধ্যমে হতে হবে তা নয়
জয় বাংলা বাঙালির জাতীয় স্লোগান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে জয় বাংলা জতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। জয় বাংলা ছিল একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনগণের সবচেয়ে প্রিয় স্লোগান। এই স্লোগানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। অতএব জয় বাংলাকে আমাদের জাতীয় ইতিহাস থেকে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর জয় বাংলার পরিবর্তে পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ চালু হয়েছিল। সেটা ছিল একটা প্রতিক্রিয়াশীল কাজ। পাকিস্তানের ভাবধারাকে ফিরিয়ে আনার জন্যই জয় বালার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ বেতারের পরিবর্তে রেডিও বাংলাদেশ ইত্যাদি আরও আনেক কিছুর বাস্তব রূপ দেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মূল নীতিকে অগ্রাজ্য করে তখন বলা হয়েছিল যে- আমাদের মন্ত্র ধর্ম-কর্ম ও গণতন্ত্র। খন্দকার মোস্তাক যেটা শুরু করেছিল পরবর্তিতে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেটা অনুসরণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে জয় বাংলা ছিল মুক্তিকামী মানুষের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেতনা, সকল মানুষকে একত্রিত করার হাতিয়ার। সবকিছুই যে আদালতের মাধ্যমে হতে হবে তা নয়। কেননা মুক্তিযুদ্ধ তো আর আদালতের সিদ্ধান্তে হয়নি। সবকিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হওয়া উচিত। জয় বালা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আছে, তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সর্বমহলে নেই। তাই আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জোরালোভাবে গুরুত্ব বহন করবে। আর একটা বিষয় হচ্ছে সবকিছুই কাগজে-কলমে থাকে না। কিছু বিষয় ধারণ করতে হয় এবং আদালত দিয়েও কোনো কিছু ধারণ করানো যায়। কেননা জনগণ তার নিজের বিশ্বাসে সবকিছু তার চেতনায় ধারণ করে এবং গ্রহণ করে। তাই বলছি সবকিছু আদালত দিয়ে চলে না। তারপরেও জয় বাংলা কেন জাতীয় স্লোগান হবে না? এ বিষয়ে আদালত যে কারণ জানতে চেয়েছে, সে বিষয়টি আমার কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়। কেননা আমরা আমাদের অর্জন ধরে রাখতে পারি না। বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি।
পরিচিতি : সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহন : লিয়ন মীর
সম্পাদনা : আশিক রহমান