ঢাকা উত্তরের নির্বাচন : আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ বেশি, গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপিও
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী নির্বাচনের আগে এই উপ-নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সংগঠিত করে নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রার্থী খুঁজছে দলটি। একইভাবে বিএনপিও এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চাপে রাখতে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
দুই দলের নেতারা মনে করেন, অল্প সময়ের মধ্যে এবং উপ-নির্বাচন হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডিএনসিসি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা ভালো করে খেয়াল করবেন। আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য এইটা একটা পরীক্ষা। একদিকে তাদের জয় দরকার অন্যদিকে ইসিতে সরকারের কোনো প্রভাব নেই এটা প্রমাণ করার। আর বিএনপির চ্যালেঞ্জ হলো, যদি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই হয়ে যাবে এই নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, আনিসুল হকের মতো পরিচ্ছন্ন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে এবং এই চ্যালেঞ্জ রক্ষাও করতে পারে। আনিসুল মারা গেছেন, এখনো এক সপ্তাহ হয়নি। আগে তার জন্য শোক শেষ হোক। অবশ্যই আওয়ামী লীগ অতীতের মতো ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেছেন, দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল, সব নির্বাচনই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে থাকে দলটি। অবশ্যই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীই জয়ী হবে। ডিএনসিসির জন্য অনেক ক্লিন ইমেজের প্রার্থী রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখনো এই বিষয়ে দলের ভেতরে কোন আলোচনা শুরু হয়নি। সময় এখনো অনেক আছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে অবশ্যই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়। সে হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিবে। তবে মেয়র আনিসুল হকের দাফনের দুইদিনের মধ্যে এসব নিয়ে আলোচনা করা অশোভনীয়। সময় যেহেতু আছে তাই দলের নেতারা আলোচনা করেই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, মেয়র পদ শূন্য হওয়ায় এই পদে প্রার্থী দিতে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীরা। এক্ষেত্রে তালিকায় রয়েছেন মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক ও আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ বি এম ইকবাল, ঢাকা-১১ আসনের এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ, সাবেক ফুটবলার ও বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে অতীতের মতোই পরিচ্ছন্ন, জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নেবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে।
গত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আনিসুল হকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তাই এবারও বিএনপির পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষেই থাকছেন দলের নির্বাহী কমিটির এই সদস্য। এছাড়াও সাবেক এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব:) কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, আবার ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় ঐক্যের চিন্তা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়েও চিন্তা করছে বিএনপি। চিত্র নায়ক অনন্ত জলিল ও গত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীর নির্বাচন করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।