ইসলামে অমুসলিমদের মর্যাদা
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সব প্রাণিকুল। মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। মানুষের মাঝে কেউ শুধু আল্লাহ তায়ালারই উপাসনা করে। তাকেই মুসলমান বলে। আর নাফরমানিরাই অমুসলিম। তারপরও তারা আল্লাহরই সৃষ্টি। একটি মুসলিম দেশে ইসলাম মুসলিমকে শুধু অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতেই বলে না, রাষ্ট্রে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ-সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহয় একাধিক স্থানে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার তুলে ধরা হয়েছে। অমুসলিমরা নিজ নিজ উপাসনালয়ে উপাসনা করবেন। নিজ ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মালয়কে সুরক্ষিত রাখবেন। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা সমান। যেসব অমুসলিমের সঙ্গে কোনো সংঘাত নেই, যারা শান্তিপূর্ণভাবে মুসলিমদের সঙ্গে বসবাস করেন তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো নয়; ইনসাফ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। (মুমতাহিনা-৮)
আল্লাহ তায়ালা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছেন পরসহিঞ্চুতা ও পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, তারা আল্লাহ তায়ালার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তায়ালাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে। (আনআম-১০৮)
এদিকে মুওতার যুদ্ধে রওনার প্রাক্কালে রাসুল (সা.) তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন, তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না। (মুসলিম-১৭৩১) অন্য হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না। (মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা-৩৩৮০৪) একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব। (আবূ দাঊদ-৩০৫২) অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে। (বুখারী-৩১৬৬) আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিমকে অসময়ে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (আবূ দাঊদ-২৭৬০) ইসলামের দৃষ্টিকোণে দুনিয়ায় মানুষের প্রাণ হরণ কিংবা জীবন নাশের চেয়ে বড় অপরাধ আর হয় না। পবিত্র কুরআনে তাই একজন মানুষের হত্যাকে পুরো মানবজাতির হত্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। (সূরা আল-মায়িদা-৩২)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দ-ায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর। এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (মায়িদা-৮)
লেখক: কবি ও সাংবাদিক