এটা কুমিল্লার মানুষের জন্য লজ্জাজনক সাইফুর সাগর
হেলায় অবতীর্ণ আধুনিক কুমিল্লার কারিগর কালাম মজুমদার। দেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা ভারতীয় সীমান্তবর্তী শহর কুমিল্লা। নিকট অতীতে কুমিল্লার গল্প বললেই উঠে আসতো উচ্চ শিক্ষার প্রাণভূমি হিসেবে। যদিও সেই দিনগুলো এখন শুধুই ইতিহাস। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের সৌন্দর্য্য, নদ-নদী, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ, কী ছিল না এই জেলাটিতে।
এই সব কিছুই প্রকৃতির দানীও সম্পদ হলেও, এগুলোকে রক্ষা করাটা ছিল বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ। বনদস্যু, পাহাড়দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করে সবুজাঞ্চলকে সাধারণ মানুষের বসবাস উপযোগী পরিচ্ছন্ন ছায়াঘেরা অভয়ারণ্য ভূমি স্বরূপ আগলে রেখেছিলেন, কুমিল্লার প্রাণ পুরুষ, শিক্ষিত কুমিল্লাকে সামনে এগিয়ে নেবার অগ্রনায়ক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এই প্রয়াত রাজনীতিবিদ। কুমিল্লা দক্ষিণকে অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখিয়েছিলেন এই মহান পুরুষ। দক্ষিণ কুমিল্লা তথা সমগ্র কুমিল্লার যে কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে কোথায় নেই মজুমদারের হাতের ছোঁয়া? ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হলেও, সন্তানের মতো আগলে রাখতেন তার রাজনৈতিক কর্মীদের।
অন্ধকারে যখন নিমজ্জিত কুমিল্লার যুব সমাজ, মরহুম মজুমদার তখন শুরু করলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের উপর লক্ষ্য রেখে, লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ দিয়ে তৈরি করেছিলেন তৎকালীন কুমিল্লার বেসরকারি সর্ববৃহৎ কলেজ ‘লালমাই ডিগ্রি কলেজ’। ধ্যান চিন্তায় এতোটাই অগ্রিম ছিলেন তিনি, কলেজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সবুজের কোলে, পাহাড়ের পাশে, যেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল থাকবে সীমিত। পুরো কলেজের চারপাশজুড়ে নিজের হাতে লাগিয়েছেন হাজার হাজার গাছপালা।
কথিত আছে, মজুমদার সাহেবের হাতে বোনা যে কোনো গাছ হতো তাজা ও শক্তিশালী। গাছ পাগল এই মানুষটি তৎকালীন সময়ে পরিবেশবান্ধব গাছ সংগ্রহ করেছেন দূর দূরান্ত থেকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের সবটুকু সময় দিয়ে গেছে নিজের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লালমাই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে। হাজারো গরীব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বিলিয়েছেন বিনা পয়সায়।
নিজের রোজগারের সমস্ত পয়সা খরচ করেছেন ছাত্র ছাত্রীদের পেছনে। তার মৃত্যুর পর সেই প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গেছে অন্ধকারের অতল গহ্বরে। এই কলেজটিতে এখন শুধুমাত্র শিক্ষকদের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নেই। কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। অনিয়ম দুর্নীতির সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটিতে। অযোগ্য শিক্ষকতার শিকারে ধস নেমেছে শিক্ষামানের। অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তার চেয়ে বেশি অযতœ এবং অবহেলায় পরে প্রতিষ্ঠানটির জন্মদাতা ও কুমিল্লার বিখ্যাত মানব আবুল কালাম মজুমদারের অবশিষ্ট স্বল্প কিছু স্মৃতি। তার স্মৃতির চিহ্নগুলো কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেঁকেছে। কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন হচ্ছে কিন্তু মজুমদারের শেষ স্মৃতিকে ধরে রাখার মতো সামান্য ইচ্ছেটুকু নেই কারও। কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হলেও, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গুটিকয়েকে এসে থেমেছে।
তার আত্মা চেয়ে আছে আমাদের দিকে, আর কেঁদে কেঁদে বলছে, আমাকে ভুলে গেলি তোরা? আমি কি তোদের জন্য কিছুই করিনি? আমি কি তোদের কেউ নই? আমার কি তাহলে আর কোনো সন্তান রইল না। আমার মাথা নিচু, আমার কাছে কোনো জবাব নেই। আপনার কাছে কি আছে কিছু বলার হে কুমিল্লাবাসী?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট