সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে
আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ যখন হয় ১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সালে এবং ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই মানুষ ভাবলো, যুদ্ধ বিগ্রহ করে এই পৃথিবীতে শান্তি আসে না। তখনই ১৯৪৮ সালে মানুষ জাতিসংঘ গঠন করলো। সবাই মিলে আমরা শান্তিতে থাকবো। এই দুই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা দিয়েই কিন্তু মানুষ ইউনাইটেড ন্যাশনস তৈরি করলো। জাতিসংঘ তৈরি করলো। এবং বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়। সেটার অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণায় আসে। সকল সদস্য রাষ্ট্র একমত হয়েই এটাকে গ্রহণ করলো। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল এজন্য যে, এই আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সনদের মধ্যে মানবাধিকারের সুচক হিসেবে যেগুলোকে দেখানো হয়েছে, পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ তাদের সংবিধানে ওই বিশ্ব মানবাধিকার সনদের বেশিরভাগ অংশ অন্তর্ভূক্ত করেছে।
আমাদের সংবিধানেও মৌলিক অধিকার হিসেবে ওই অধিকারগুলোর কথা উল্লেখ রয়েছে। ইউনিভার্সেল ডিক্লেয়ারেশন অব হিউম্যান রাইটসে যে আঠারোটা বিষয় বলা আছে, প্রত্যেকটা বিষয় আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ আছে। আর্টিকেল ৪৪ অনুযায়ী, সংবিধান এই মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষার গ্যারান্টি দিচ্ছে। এবং বলছে যে বাংলাদেশে যদি এই সব মৌলিক অধিকার কোনোটা কারো ক্ষুন্ন হয়, কেউ যদি মনে করে কারো মৌলিক অধিকার রক্ষা হচ্ছে না, সে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করতে পারে। আপনি যদি মনে করেন, আমার বেঁচে থাকার অধিকার, আমার শিক্ষার অধিকার, আমার জীবনের অধিকার কোনো একটা বিষয়ে অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে, আমি উচ্চ আদালতে যাবো। এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক এবং আইনগত পরিস্থিতি। সংবিধানের সাথে সাংর্ঘষিক কোনো আইন করা যাবে না।
এই সংবিধানের সাথে সাংর্ঘষিক কোনো কিছু যদি থাকে, তাহলে যতখানি সাংর্ঘষিক ততটাই বাতিল হয়ে যাবে। তার মানে দাঁড়ালো এই যে, মানবাধিকারের বাইরে কোনো আইন পাশ হতে পারবে না। মানবাধিকার সনদের মধ্যে যা কিছু আছে, সেগুলোই আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে লেখা আছে। আন্তর্জাতিক ভাবে এগুলো রক্ষার জন্য, জাতিসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি আছে। ওখানে প্রতি বছর প্রত্যেক দেশ তাদের রিপোর্ট দেয়। মানবাধিকার বিষয়ক উন্নতি কতটা হলো, বাস্তবে আমাদের দেশে আইনগত সুবিধা আছে। চলাফেরার স্বাধীনতা, জীবনের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। হত্যা, গুম , খুন, চিন্তা ভাবনার স্বাধীনতা, বেচেঁ থাকার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি লংঘন হয়, তবে প্রতিকারে সংবিধান সুরক্ষা দেবে। আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের নিকট সরকার থাকবে দায়বদ্ধ।
পরিচিতি : এ্যাডভোটেড, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ
মতামত গ্রহণ : সানিম আহমেদ
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ