মর্যাদার দ্বন্দ্ব এবং সাধারণ মানুষ
মো. আবদুল কুদ্দুস
একটি দেশে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা মানে সেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলে আমি মনে করি। এটি দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে। কেননা, গ্রামের মানুষের শহরমুখি হওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমে আসবে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের অর্জিত অর্থ নিজ এলাকাতেই খরচ করতে পারবেন। ছেলেমেয়েদের কম খরচে সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করাতে পারবেন। কিন্তু নতুন জাতীয়করণকৃত এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষার প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে এমন ভাবনাও ঠিক নয়। কিন্তু মর্যাদা-অমর্যাদার প্রশ্নে সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’ শ্লোগান সামনে রেখে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা দেশে জাতীয়করণ হতে যাওয়া শিক্ষকদের মর্যাদা কেমন হবে, ক্যাডার? না নন-ক্যাডার? এবিষয়ক যে প্রশ্ন তুলেছেন সেই ভাবনা থেকেই আমার লেখার প্রয়াস। প্রথমেই বলে রাখি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারি কর্মকর্তা বলে কোনো ভাষা/শব্দ নেই। সংবিধানের নবম ভাগের বাংলাদেশের কর্মবিভাগের প্রথম পরিচ্ছেদ ‘কর্মবিভাগে’ প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ‘কর্মচারী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই একটি শব্দই পারে উপযুক্ত সমস্যাটির সমাধান দিতে। চাইলে জীবনের তেরটি বছর জেল না খেটে গদিতে বসেই জীবন কাটাতে পারতেন।
কিন্তু তিনি তা না করে দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন আমৃত্যু। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সকল নির্যাতনকে তিনি করেছেন বরণ। বাংলার মানুষ তাকে ভালোবেসে অতি যতœ করে, বীরের মর্যাদা দিয়ে, গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তার না চাওয়া প্রধানন্ত্রীর আসনেই বসিয়েছেন। শিক্ষাজীবনে আমরা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন, গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামালসহ বিসিএস পরীক্ষা থেকে মর্যাদাপ্রাপ্ত নয় এমন অনেক কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের কালজয়ী লেখনী পড়েই তো আমাদের মধ্যে অনেকে আজ বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী দেশের নাগরিক মর্যাদাকে পঁচিশটি স্তরে বিন্যাস্ত করা হয়েছে। এখানে যে পঁচিশ শ্রেণির নাগরিক রয়েছেন তাতে বিসিএস শিক্ষা অথবা যুগ্ন সচিবের পদমর্যাদার নিচের কর্মকর্তাদের নম্বর কতো কেউ বলতে পারবেন? অথচ ওই তালিকায় নিরক্ষর একজন মানুষ তার ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনবান্ধব কাজের মাধ্যমে নিজের অবস্থান ওই পঁচিশ জনের সর্বোত্তমটাও তৈরি করে নিতে পারেন। পেয়েছেন এমন অনেক ইতিহাস বাংলাদেশেই আছে। দেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরমে দেশের কোনো ব্যক্তি গণ্যমান্য বলে পরিচিত হবেন তার একটি তালিকা লাল ফন্টে বর্ণিত হয়েছে। এমন নির্দেশনা ভালো লক্ষণ নয়। এ ইন্ডিকেটরস মানুষকে শুধু হিং¯্র হতেই শেখায়। কেননা প্রতিটি মানুষ সেই গণ্যমান্য স্তরে উঠার জন্য নানারকম অপকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশে অশান্তি তৈরি হয়।
লেখক : শিক্ষক, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ