ফিলিস্তিন ও ইসরাইল হবে পৃথক দুই রাষ্ট্র
মোহাম্মদ আবু নোমান
ট্রাম্পের মাথা গরম হয়ে আছে! তাই মুসলিম জাহানকে এর প্রতিদান দিতে ধূর্ত ট্রাম্প আর দেরি করতে পারেন? দেরি না করেই সন্ত্রাসী ইসরায়েলের প্রতি স্পষ্টতই পুরষ্কার ঘোষণা করলেন!
বিশ্ব মুসলিমদের অন্যতম পবিত্রতম মসজিদ আল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস যে শহরে অবস্থিত, সেই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে সংকটের আগুনে নতুন ঘি ঢালার সাথে সহিসংতা উসকে আগুনের বৃত্তে ছুড়ে ইসরায়েলকে আবারও খুশি করলেন। অন্যদের ভূখ- দখল করে রাষ্ট্র ও বৈধ রাজধানী হয় কী করে? ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সাথে মধ্যপ্রাচ্যকে আগুনের কু-লীর মধ্যে ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর নয় কি?
একটু দেরিতে হলেও প্রমাণ হবে- ট্রাম্পের জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়বে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশেষ করে সৌদি আরবের রাজপরিবারই। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির মতো জঘন্য, একতরফা, একগুঁয়েমি, অযৌক্তিক, অন্যায়, অগ্রহণযোগ্য, অপরিণামদর্শী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন দুঃখজনক সিদ্ধান্তের ফলাফল সৌদি রাজপরিবারকেই বেশি ভোগ করতে হবে। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী, যা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার কফিনে শেষ পেরেক। আমেরিকা যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণবাদী, দখলদার ও দখলদার দেশের সহযোগী তার নমুনা ফিলিস্তিন। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই অভিবাসী ও মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপও নেন তিনি। এসব কর্মকা-ে ট্রাম্পের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব পূর্বেই ছিল। পরবর্তীতে সু-চতুর ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় ভূমি সৌদি আরবকে বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল- রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থসিদ্ধির সাথে কাগজে, কলমে ও বিবৃতিতে হলেও মুসলমান ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তার যে বৈরিতা নেই তা প্রচার করা। ট্রাম্প জেরুজালেম ঘোষণার মাধ্যমে জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে তেহরান থেকে বৈরুত, বার্লিন, প্যারিস সর্বত্রই বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এই সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানাবে না। আরব লীগ কড়া প্রতিবাদ করেছে। হামাস, হিজবুল্লাহ, ইরান, তুরস্কের হুমকি ধমকি আছেই। তুর্কি প্রেসিডেন্ট তো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলে সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণাই দিয়েছেন। চীনও এর বিরোধিতা করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সারথি ব্রিটেনও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রকাশ্যেই দ্বিমত পোষণ করেছেন। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত ৮ ডিসেম্বর জরুরি বৈঠকে তোপের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কার্যত পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিরাপত্তা পরিষদের অর্ধেকের বেশি সদস্য দেশের আহ্বানে বৈঠকে বিষয়টির মীমাংসায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার ওপর জোর দেয় যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় এ নিয়ে ভোটাভুটির জন্য কোনো প্রস্তাব তোলা হয়নি। বিশ্বব্যাপী তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলের পাশে থেকেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া খ্যাত ইসরায়েল কী করে শান্তিতে থাকবে যদি সে সীমান্ত নির্ধারণ না করতে চায়, যদি না সে দখলের অবসান ঘটায় এবং যদি না সে ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সাথে পৃথক দুই রাষ্ট্র ঘোষণা না করে।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আরব রাষ্ট্রগুলোর বিভাজন দূর না হওয়ার পর্যন্ত ফিলিস্তিন ইস্যুতে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসা সম্ভব নয়। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনয়নের আগে আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করতে হবে আরব দেশগুলোকে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা আরব বিশ্বকে আবার ঐক্যবদ্ধ করবে এমনটাই আশা বিশ্ব মুসলিমের। একথা ঠিক যে, আমেরিকাকে এই সীমাহীন পাগলের (ট্রাম্পের) পাগলামির মাসুল দিতে হবে এবং তা হবে চড়া মাসুল।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ