সোফিয়া, পিয়াজ ও ধীমান
‘সোফিয়া’ যখন এলো তাকে দেখতে উদ্বেলিত হওয়া মানুষের কাতারে শরিক হতে পারিনি। এ নিয়ে দুঃখও ছিল না। কিন্তু এখন আফসোস হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কিত প্রশ্নে সোফিয়া বলেছিল, ‘পৃথিবীতে কথা বলার মতো আরও অনেক বিষয় আছে।’ এখানেই না দেখতে যাবার বিষয়ে আফসোসটা। প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার যে নমুনা প্রতিনিয়ত চারিপাশের্^ দেখি, টেলিভিশনের প্রশ্নোত্তরে দেখি, তার থেকে সোফিয়ার এমন উত্তর ঢের স্মার্ট, ঢের বুদ্ধিময়। সোফিয়াকে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে দেশে আনায় যারা ভ্রু বাঁকা করেছেন, তাদের বলি, শেখার আছে অনেক কিছু এবং সেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছ থেকে হলেও। তবে কষ্ট লাগে, সোফিয়ার এমন স্মার্ট প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকেও যারা শিখতে অপারগ হন তাদের জন্যে। প্রশ্নোত্তর পর্বের মানুষদের প্রশ্ন ও উত্তরে যখন সোফিয়া টেক্কা মেরে যায়, তুলনা জনিত বিবেচনায় তখন কষ্ট লাগা-ই স্বাভাবিক। অবশ্য সান্তনা খোঁজা যেতে পারে এই ভেবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারীনি ‘সোফিয়া’র নামের শুরুও ‘স্মার্ট’ এর ‘এস’ দিয়ে। একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখলাম, রোবট সোফিয়ার ভাষ্যে উনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাংবদিকদেরকে আমার আপন মনে হয়েছে! উনারা আমার মতোই!’ যে ভদ্রলোক এই স্ট্যাটাস লিখেছেন সোফিয়ার ভাষ্যে, সম্ভবত উনিও সোফিয়ার সফটওয়্যারের ভাষা পড়তে পেরেছেন। আর সোফিয়ার সফটওয়্যারও পড়তে পেরেছে আমাদের মনের ভাষাতত্ত্ব। শুধু আমরা কিছু অভাজন সেই ভাষা বুঝতে এবং পড়তে ব্যর্থ হয়েছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সোফিয়াকে দেখতে যাওয়া নিয়ে আমার যে মানসিক অহমিকা ছিল এখন বুঝতে পারছি সেটা ভুল। বুদ্ধিমত্তা আসলে কৃত্রিম হয় না, বুদ্ধিমত্তাকে যন্ত্রের সাথে জুড়ে দেওয়ার কাজ করে কিন্তু প্রকৃত বুদ্ধিমত্তাই। তাদের বুদ্ধিমত্তাতেই সোফিয়া চলে-ফিরে, কথা বলে। সোফিয়ার পেছনের প্রকৃত বুদ্ধিমত্তাই বুঝতে পারে ‘হাউ টু ম্যানেজ’। যা আমরা পারি না। ‘ঘর কা না ঘাটকা’রা আসলে কিছুই পারে না। ‘দৈনিক মানব জমিন’ তার খবরের শিরোনাম দিল ‘একটি পিয়াজের দাম কত?’ একই দিন আমার বড়ভাই অভিনেতা-নির্মাতা আল মনসুর লিখলেন, ‘গত ৫০ বছরে পিয়াজের দাম ১২০ টাকা কেজি হয় নি। দয়া করে কেউ টুঁ শব্দ করবেন না। এটা ‘গিনিস বুক’এ যাবে।’ পঞ্চাশ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে, খরচে ঢাকা টরন্টোকে ছাড়িয়ে মন্ট্রিয়লকে ধরে ফেলেছে, এমন খুশিকে সেলিব্রেট না করে দেশের অভিনয় জগতের সেলিব্রেটিদের লিজেন্ড আল মনসুর মানে আমার বেলাল ভাই কেন যে পিয়াজ নিয়ে পড়লেন বুঝলাম না।
আমি বারবার বলি ‘বৃদ্ধি’ মানেই উন্নতি। আমাদের সবকিছুতেই কেমন উন্নতি হচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে। আমাদের দেশে সোফিয়া চলে এসেছে, আইফোন টেন এসেছে। সোফিয়াকে আনতে খরচ হয়েছে শোনা কথায় ১৬ কোটি। এটা কী আর এমন টাকা, যেখানে চার হাজার কোটিই কিছু নয়! দেশের মানুষ প্রতি এক টাকা করেও তো পড়েনি। আর সোফিয়াকে আনা তো দরকার, দেখলেন না সোফিয়া কী সুন্দর প্রশ্নের উত্তর দেয়, এড়িয়ে যেতে মিষ্টি করে বলে, ‘পৃথিবীতে কথা বলার মতো আরও অনেক বিষয় আছে।’ এত বিষয় ছেড়ে আমার বড়ভাই কেন যে, পেঁয়াজ নিয়ে পড়লেন! বড়ভাইদের নিয়ে বড় ঝামেলা, এনারা পিয়াজ নিয়ে কথা বলবেন, চালের দাম নিয়ে কথা বলবেন, বলবেন বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক নিয়ে, হিসাব নিয়ে পরবেন কত লক্ষ কোটি টাকা দেশ ছেড়ে অভিবাসী হলো! এনাদের নিয়ে কী করা যায়! এনাদের শেখানোর জন্যই সোফিয়ার আগমন, ‘পৃথিবীতে বলার মতন আরও কত কথা রয়েছে’, এত কথার মধ্যে এনারা কী শিখলেন! এনারাও কিছু শিখলেন না, দরকার নেই বিধায় ওনারাও কিছু শিখলেন না।
ফুটনোট : এনারা মানে বড়ভাইয়েরা তো কিছুই শিখলেন না, খালি উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করলেন, সেটা থাক। এখন ‘ওনাদের’ কথা বলি। ‘মেয়েপক্ষের একজন ঘটককে প্রশ্ন করলেন, ছেলের বুদ্ধি কেমন, বুদ্ধিমান তো? ঘটকের চটজলদি উত্তর, পোলার নামই তো ধীমান।’
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ