বিশেষ সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলে তাদের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব
আশিক রহমান : তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেহেতু আদালত কর্তৃক নাকোচ হয়ে গেছে, সুপ্রিম কোট সেটা নাকোচ করে দিয়েছেন জাজমেন্টের মাধ্যমে তখন আমাদের প্রয়োজন পেছনের দিকে না গিয়ে সামনের দিকে কীভাবে এগোতে পারি এবং ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ছাড়া আমরা নিজেরাই নিজেদের তত্ত্বাবধায়ক হতে পারি কিনা গণতান্ত্রিক উপায়ে তা ভেবে দেখাÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সংবিধান প্রণেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম। তিনি বলেন, আর সেজন্য আমি বলছিÑ বিরোধী দলকে স্পেস দিতে হবে যেন তারা নিরাপদ বোধ করতে পারে। এ ধরনের একটা আলাপ-আলোচনা শুরু করা দরকার। যেটাকে আমরা বলি স্পোর্সম্যানশিপ স্পিরিট, সেটা আনতে হবে। এটা অপজিশনকেও যেমন বুঝতে হবে, আবার আলাপ-আলোচনার দ্বারও খোলা রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে সংলাপ নয়। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার সেটার দিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন সব সময়ই আমাদের এখানে সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটিএম শাসুল হুদা কমিশনসহ দুটি কমিশন ছিল খুবই শক্তিশালী। নির্বাচন কমিশনে ওই ধরনের ব্যক্তিত্বই দরকার। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলে তাদের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না। নির্বাচন করার একটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেজন্য নির্বাচন আমাদের করতে হবে। তবে যেটা আমি মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভেতরের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করা এবং সংবিধান বহির্ভূত কোনো পদক্ষেপ যেন কেউ জেদ করে গ্রহণ না করে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকা দরকার। এটা করতে হবে রাজনীতি, দল ও দেশের স্বার্থে। সংবিধানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে।
তিনি বলেন, কখন কে কী বলছেন, না বলছে তা রাজনৈতিক দিনপঞ্জির বিষয়। যেটা করা দরকার সরকারি দলে যারা রয়েছেন বা যারাই সরকারের থাকেন না কেন বিরোধী দলকে একটা জায়গায় দিতে হবে। সেই জায়গাটা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কাপর্ণ্যতা হবে আত্মঘাতী।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যদি তিনি আদালতের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি পান তাহলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এজন্য একটা রাজনৈতিক স্পেস সৃষ্টি করা দরকার। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা চিন্তা করা দরকার। সবার মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করা দরকার। জেদাজেদির জায়গায় গেলে তো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার খুব দুঃখ লাগে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যে সরকার এলো, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। সেটাকে আবারও প্রত্যাবর্তন করতে হলো। এটার ব্যাপারে তখন বিরাট ক্যাম্পেইন হলো। সাম্প্রদায়িকতার বিরাট গন্ধ জুড়ে দেওয়া হলো যে, ‘জয় বাংলা’ হিন্দুদের শ্লোগান। এ ধরনের কাজও তো আমরা করেছি। এটা দুর্ভাগ্য যে বাঙালিরা এরকম যেকোনো একটা চালিয়ে দিয়ে বিভক্ত করতে পারে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এই বিভ্রান্তি থেকে মানুষকে বের হয়ে আসতে হবে। এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ কথা, আচরণ, ইতিহাস বিকৃতি, যা অপরাধ বলে আমি বিবেচনা করি। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক অপরাধ। এ বিষয়ে কোর্টের নির্দেশনা ঠিক আছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছেÑ কোর্টের নির্দেশনা লাগবে কেন? এমনটা লাগার কথা নয়।