হলি আর্টিজান মামলা : অবশেষে দাখিল হচ্ছে চার্জশিট
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : প্রায় দেড় বছর তদন্ত শেষে হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট দাখিল করতে যাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। চার্জশিটে মাষ্টারমাইন্ড তামিম, ডা. রোকন ও তানভীর কাদেরীর নাম থাকছে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে, আইটি সমন্বয়ক হিসেবে মারজান ও আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে থাকছে চাপাই মিজান ও রিগ্যানের নাম।
চাপাইনবাবগঞ্জ ও গাইবান্ধায় হলি আর্টিজানে হামলার প্রাথমিক পরিকল্পনার পর চুড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয় তানভির কাদেরীর বসুন্ধরার বাসায়। এসব ছাড়াও জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির কথাও উল্লেখ থাকছে চার্জশিটে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃত রিগ্যান, মাহুফুজ, রাজিব, রাশেদ, সোহেল ও জাহাঙ্গিরসহ ৭জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলায় জঙ্গিরা একে-২২ রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড, চাপাতি ব্যবহার করে। ভারতের বিহার রাজ্য থেকে একে-২২ রাইফেল এবং ছোট অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়। গ্রেনেড তৈরির উপকরণ বিশেষ করে পাওয়ার জেল, ডেটোনেটরও সংগ্রহ করা হয় ভারত থেকে।
এ বিষয়ে রাজীব গান্ধী তার জবানবন্দিতে বলেছে, হলি আর্টিজানে হামলা করার জন্য ৩/৪টি একে-২২ রাইফেল এক মাস আগেই রিপনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। মারজান, ছোট মিজান এর মাধ্যমে ভারত হতে ৩/৪টি ছোট অস্ত্রগুলিসহ এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহ করে। মারজান তার ভগ্নিপতি সাগরের মাধ্যমে গুলশান হামলার ব্যবহৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরক আমের ঝুড়িতে করে ঢাকার বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে আসে। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় চকলেট নামে এক জঙ্গির বাসায় সোহেল মাহফুজ হলি আর্টিজান হামলার গ্রেনেড তৈরি করে। ওই গ্রেনেডগুলি মারজান ও চকলেট বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে আসে।
মিরপুরের রুপনগরে পুলিশী অভিযানে নিহত মেজর জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে মুরাদ, আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিহত তানভীর কাদেরী ও দেশত্যাগ করে স্বপরিবারে সিরিয়ায় চলে যাওয়া ডা. রোকনউদ্দিন স্থানীয়ভাবে অর্থযোগান দেয়। ডা. রোকনউদ্দিন প্রায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছেন, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ তার পেনশনের টাকা দান করেছেন এবং তানভীর কাদেরী তার উত্তরার ফ্ল্যাট বিক্রি করেও গুলশান হামলায় অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
আর বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চোধুরী। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র একাধিক দেশের সন্ত্রাসী সংগঠনের মদদদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এই ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তামিম চৌধুরীর তানভীর কাদেরী ও মারজানের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে সহযোগীসহ মারজান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে, তানভীর কাদেরী আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় ও তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
এছাড়াও রাজধানীর বিদেশি অধ্যুষিত একটি জায়গায় হামলার পরিকল্পনা থেকেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিকে জঙ্গিরা প্রথম বেছে নেয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন