পানাহারের সুন্নত পদ্ধতি
হুমায়ুন আইয়ুব : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা হলো পানাহার করা। আর পানাহার করার সময় ইসলাম কিছু আদব-কায়দার নির্দেশ দিয়েছে। এ সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করা হলো। হজরত উমর ইবনে আবু সালামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা খাওয়ার সময়) রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, (শুরুতে) ‘বিসমিল্লাহ’ বল, ডান হাত দ্বারা খাও এবং তোমার নিকট (সামনে) থেকে খাও। (সহীহ বোখারী : ৫৩৭৬, সহীহ মুসলিম: ২০২২) শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ’ বলতে হবে। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন আহার করবে, সে যেন শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ। (আবু দাউদঃ ৩৭৬৭ তিরমিজীঃ ১৮৫৮) খাওয়ার শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। হজরত মু‘আয ইবনে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দো‘আ পড়বে, ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাজী আত্বআমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুউওয়াহ।’ (অর্থাৎ সেই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোনো চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মাফ করে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ: ৪২০৩) খাবারের দোষ বর্ণনা করা নিষেধ। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কোনো খাবারের দোষ বর্ণনা করেননি। ভাল লাগলে তিনি তা খেয়েছেন এবং খারাপ লাগলে তিনি তা ত্যাগ করেছেন।’ (বোখারী: ৪৫?৯, ৩৫৬৩ মুসলিম: ২?৬৪) কেউ খানা খাওয়ার দাওয়াত দিলে বিনা ওজরে আপত্তি করা উচিত নয়। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কাউকে খানা খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন তা (কোন ওজর না থাকলে সাদরে) গ্রহণ করে। আর সে যদি রোজা অবস্থায় থাকে, তাহলে (দাওয়াতকারীর জন্য) দো‘আ করে। আর যদি রোজা অবস্থায় না থাকে, তাহলে যেন আহার করে। (মুসলিমঃ:১৪৩১) কয়েকজন মিলে একসঙ্গে খেলে বরকত লাভ হয়। ওয়াহশী ইবনে হারব (রা.) হতে বর্ণিত, সাহাবাগণ নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা খাই, কিন্তু কেন যেন পেট ভরে না।’ তিনি বললেন, তাহলে হয়তো তোমরা আলাদা আলাদা খাও। তারা বললেন, জী হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমরা জামা‘আতবদ্ধভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করো, তাহলে তাতে তোমাদের জন্য বরকত দান করা হবে। (আবু দাউদ: ৩৭৬৪) হেলান দিয়ে খাওয়া উচিত নয়। হজরত আবু জুহাইফা ওয়াহাব ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি হেলান দিয়ে বসে আহার করি না। (বোখারী: ৫৩৯৮, ৫৩৯৯) খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে ও চুষে খাওয়া সুন্নাত। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন আহার করে, সে যেন তার আঙ্গুলগুলি না মুছে; যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অন্য (শিশু প্রভৃতি) কে দিয়ে চাটিয়ে নেয়। (বোখারী: ৫৪৫৬ মুসলিম: ২?৩১) সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন