একটি ভিত্তিহীন ও অসত্য রহস্যময় ভিডিও
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক মহল এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এই ভিডিওটির প্রচারিত তথ্যের উপর আস্থা রেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন। ভিত্তিহীন এবং অসত্য একটি ভিডিও নিয়ে সরকারি দল যেভাবে জাতীয়তাবাদী দলের পেছনে লেগেছে, তাতে সাধারণ মানুষের মনের ভিতর কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। সাম্প্রতিক দুর্নীতির ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ অপেশাদার ও অপরিপক্ক হাতে তৈরি তা স্পষ্ট, তার জের ধরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যেভাবে চরম উত্তেজনা দেখাচ্ছে, তাতে সম্পূর্ণ রূপে বুঝা যায় যে, ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার একটা মিথ্যা ভিডিওকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিধি বাম, ভিডিওটির তথ্যের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি কানাডা মন্ট্রিয়লে কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির সাংবাদিক বন্ধুর সাথে কথা বলেছি, গুগলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক বন্ধুর ভাষ্যমতে, এমন নামের লোগো সজ্জিত কোনো টেলিভিশন চ্যানেল পুরো কানাডাতেও নেই। তাহলে কিভাবে আসলো এই ভিডিও? আমার বন্ধু ভিডিও চিত্র স্পেশালিস্ট সুইডেনে থাকে, তার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। প্রাইমারি লেভেলে পড়ুয়া স্টুডেন্টরা আরও ভালো ভিডিও তৈরি করতে পারে। আরও বেশি আশ্চার্যান্বিত বিষয় হলো, ভিডিওটি তৈরি কাল এবং স্থান বাংলাদেশের কুমিল্লাতে। ভিডিওটি ইউলিড সফটওয়্যার দিয়ে তৈরিকৃত, যা অনায়াসেই পাওয়া যায় অনলাইনে। আরও হাস্যকর বিষয় হলো, ভিডিওটির চিত্রগ্রহণ এবং উপস্থাপকের মৌখিক লিপসিং শূন্য শতাংশও মিল নেই। আরও মজাদার বিষয় হলো, ভিডিওটির নেপথ্যে যে কণ্ঠটি দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ রোবোটিক ভয়েস। যে কেউ গুগল টকারে গিয়ে ইংলিশে যা কিছুই লিখবেন, তাই নারী কণ্ঠে রোবোটিক কণ্ঠে বলে দিবে। এই ভিডিওতে তাই করা হয়েছে। পুরো খবরটি গুগলে লিখে এবং গুগল রোবোটিক টকিং সিস্টেমে নেপথ্য কণ্ঠ প্রদান করা হয়েছে। আমার মতামত: যে ভিডিওটি বানিয়েছে, সে নিজেও হয়তো ভাবেনি ভিডিওটি ভাইরাল হবে এবং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই ভিডিওর উপর বিশ্বাস আনবে। অবাক বিষয়: যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং আইটি পার্ক দিয়ে সারা দেশ ভরে ফেলছে, সেই সরকার প্রধানের কাছে এমন অবিশ্বাস্য ভিত্তিহীন ভিডিওটি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার প্রয়াস চলছে কি-না নিজ দলের অন্তরে, তা যতœ সহকারে তদন্ত করা উচিত। ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ বাঙালিকে আর বোকা বানানোর সুযোগ নেই, কারণ বাঙালিরা এখন সবাই স্মার্ট, এবং তাদের ফোনগুলোও অনেক স্মার্ট। সবাই প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে যেসব তেলবাজ সাংবাদিকরা ভুল তথ্য প্রদান করে দ্বিধা সৃষ্টি করছেন, তাদের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন