তাগিদ থাকলেও হচ্ছেনা গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস
মতিনুজ্জামান মিটু : সময়ের চাহিদা পুরণে তাগিদ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতায় দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছেনা গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস (গ্যাপ)। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কৃষিবিদদের ধারণামতে এপর্যন্ত বাংলাদেশের আবাদি জমির মাত্র দুই থেকে তিন ভাগ গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস (ভাল কৃষি অনুশীলন) এর আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকী ৯৮ ভাগই রয়েছে গ্যাপের বাইরে। এগ্রিকালচার উইং এর ২০১৪-১৫ সালের হিসাবে দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে চাষ হচ্ছে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৮৩ হেক্টরে। বাকী ২ লাখ ১০ হাজার ২৭ দশমিক জমি পতিত হয়ে পড়ে আছে।
আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বিগত কয়েক বছর দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাল কৃষি অনুশীলনের (গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস- গ্যাপ) ভাবনা ও প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাতে অগ্রগতি তেমন হয়নি। গ্যাপের অভাবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বহু কৃষি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে পারছেনা। ইতোমধ্যে পান ও আলুসহ কোনো কোনো অর্থকরি ফসল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিসে উৎসাহি হয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বিগত বছর গুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি ও হর্টেক্স ফাইন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েকটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ ফাইটোস্যানিটরী ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, আইপিএম কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এসব প্রকল্পের আওতায় জমিতে সেক্স ফেরমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক, কম্পোস্ট সার, ভার্মিকম্পোস্ট, কুইক কম্পোস্ট সার, কুমড়া জাতীয় মাছি পোকা দমনে মিষ্টি কুমড়ার ফাঁদ, ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ ঠেকাতে উপকারি বন্ধু পোকা, পাখী তাড়াতে ফসলের ক্ষেতে গাছের ডাল পুতে দেয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে জমিতে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাসায়নিকের ব্যবহার কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আম, লিচু ও সবজিসহ উচ্চমূল্যের ফসল গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস এর মাধ্যমে উৎপাদন করে ওআইসিভূক্ত দেশসহ বিদেশে রপ্তানী বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষে সরকারি অর্থায়নে ‘ইনহ্যান্সিং এক্সপোর্ট অব হাই ভ্যালু ক্রপস অ্যামং দ্য ওআইসি মেম্বর স্টেটস থ্রু ইন্ট্রডাকশন অব গুড এগ্রিকালচারাল প্রাকটিস’ নামের একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, জনস্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা ভাল কৃষি অনুশীলনের মধ্যে পড়ে। সময়ের নতুন ধারণা ‘গ্যাপ’ বাংলাদেশে কার্যকরে নীতিনির্ধারনী মহলে চিন্তা ভাবনা রয়েছে। গ্যাপ কার্যকরের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরীর কাজ চলছে।॥