‘তোমরা কারা, আমি কোথায় যাব তোমাদের সাথে’?
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী
সেই দিনটি কখনই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এখনও তার কথা, তার চলে যাওয়া মনের অজান্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। উনাকে যখন রাজাকার-আলবদররা তুলে নিয়ে যায়, সেই মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার এখনও মনে আছে, তাকে তুলে নেওয়ার আগের মুহূর্তে তিনি বাসায় বসে পিলখানার বোম্বিং দেখছিলেন আর হেসে হেসে বলছিলেন, ‘এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের বিজয় হয়ে যাবে, আমরা স্বাধীন হতে চলেছি।’ শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী দৈনিক আমাদের অর্থনীতি সাথে আলাপকালে এই সব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই বাসার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। সেই সময় তিনি আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। যারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তাদের তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন ‘তোমরা কারা, আমি কোথায় যাব তোমাদের সাথে’? তখন রাজাকাররা তাকে বলেছিল, ‘হ্যান্ডস আপ, এতো কথা বলার দরকার নেই, আমাদের সঙ্গে গেলেই বুঝতে পারবেন।’ তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন কেন যাব, কোথায় যাব? জবাবে তাকে বলা হয়েছিল, আমাদের সঙ্গে গেলেই জানতে পারবেন। আবেগাপ্লুত শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, তিনি সব সময়ই বাংলাদেশের কথা বলতেন, মনে-প্রাণে, কাজে-কর্মে বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াকে যথার্থ মনে করতেন। তিনি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। আমরা যে একটি স্বাধীন দেশ পাবো, এটা তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তিনি যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পুরো নয় মাস মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি সর্বাত্মকভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতাকে দেখতে পেয়েছিলেন। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তেও তিনি হাসছিলেন আর বলছিলেন, ‘আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বিজয় এসে যাবে, আমরা স্বাধীন হতে চলেছি।’ তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, আমাদের বিজয়ের ব্যাপারে। আমরা যে স্বাধীন হতে চলেছি, এটা তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন।
তার চলে যাওয়াটা আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল। এ বিষয়ে আমি ভাষায় কোনো কিছু প্রকাশ করে বলতে পারবো না। তার চলে যাওয়াটা বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
পরিচিতি : শহীদ জায়া
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন