বুদ্ধিজীবী হত্যা : এই ক্ষতি অপূরণীয়
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনাটি আগেই ছিল। ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানিরা দেখে দেখে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের উপর হামলা করে। তারপরও যখন নয় মাস যুদ্ধ করার পরে পাকিস্তানিরা দেখল, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে, তখন তারা একটি গভীর ষড়যন্ত্র তৈরি করল। তারা চাইল, যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়, তারা যেন বুদ্ধিজীবীবিহীন রাষ্ট্র হয়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে পারলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দুর্বল হয়ে যাবে। তারা কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এজন্য ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এমন নৃশংস হত্যাকা-টি ঘটিয়ে ছিল। এই দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে অচল করার জন্য দেশের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, শিল্পী লেখকসহ চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের জোরপূর্বক অপহরণ করে হত্যা করে। তাদের টার্গেট আরও বেশি ছিল। কিন্তু সময় কম থাকার কারণে বা গোয়েন্দাগিরী করার জন্য বাঙালীরা তেমন সহযোগিতা করেনি, তাই সংখ্যাটি কম হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরে তাদের একটি তালিকা পাওয়া যায়। তালিকাটিতে এখন জীবিত দেশের নামকরা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের নাম পাওয়া যায়। হয় তো সুযোগ পেলে তাদেরও হত্যা করা হতো। এই বুদ্ধিজীবীগণ কোথায় থাকতেন এমন তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে, হয়তো আমরা আরও বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীদের হারাতাম। যা হোক আমাদের সৌভাগ্য তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে যতজন বুদ্ধিজীবী তারা হত্যা করেছে, তাতে এই দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
এই ক্ষতি অপূরণীয়। তারা বিভিন্নভাবে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে। ২৫ মার্চ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. মুনির চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। যেটা ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের একটি ধাক্কা।
এসব বুদ্ধিজীবী বিয়োগে আমাদের দেশের যে ক্ষতি হয়েছিল, এটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। তাদের স্মরণ করে এখন আমরা প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।
পরিচিতি : সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ : গাজী খায়রুল আলম
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ॥