খসড়া ‘সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৭’ এর বেশ কিছু ধারা ঝুঁকিপূর্ণ : টিআইবি
তানভীর আহমেদ: খসড়া ‘সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৭’ এর বেশ কিছু ধারা জনপ্রশাসনের পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল বুধবার টিআইবি কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। দক্ষ, জনবান্ধব, স¦চ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন নিশ্চিতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক দীর্ঘকাল প্রতীক্ষিত ‘সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৭’ এর খসড়া প্রণীত হওয়ায় টিআইবি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পেশাগত উৎকর্ষ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষতা ও নির্বিঘœ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে খসড়া আইনটির বেশ কিছু বিধান পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান সংস্থাটি। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৭’ এর খসড়া প্রণয়ন একটি দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত সময়োপযোগী উদ্যোগ। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উন্নততর পেশাদারিত্ব, মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক মূল্যায়ন এবং বিশেষ করে জনপ্রশাসন যেন দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও চাপের ঊর্ধ্বে থেকে সততা ও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে খসড়া আইনটির বেশ কিছু বিধান পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।”
রাষ্ট্রপতির বিশেষ এখতিয়ারে চারটি সর্বোচ্চ স্তরে দশ শতাংশ কর্মচারী প্রেষণে বা চুক্তিতে নিয়োগের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা জনপ্রশাসনে দলীয়করণ ও পেশাদারিত্ব খর্ব করার ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নির্ধারণ ব্যতিরেকে ‘সন্তোষজনক’ পদোন্নতির সুযোগ আইনে সংযুক্ত হলে জনপ্রশাসনে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন হবে এবং পেশাগত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।” একইসাথে, চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার যে কোনো সময় যে কোনো কর্মচারীকে কোন প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়া চাকরি থেকে অবসর প্রদান করতে পারবে বলে যে বিধান খসড়ায় রাখা হয়েছে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
খসড়া আইনটির শিরোনামে প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে সরকারি শব্দটির ব্যবহার সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থি উল্লেখ করে ড. জামান বলেন ধারা (৮) অনুসারে ‘সরকারের কর্মচারীগণের উপর সরকারের’ নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা জনপ্রশাসনে রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে বস্তুনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের সম্ভাবনাকে সংকুচিত করবে। তিনি বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ (১) ধারা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও খসড়া আইনের (৪৬) ধারায় দায়িত্ব পালনজনিত কারণে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে চার্জশিট দেওয়ার আগে গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমতি রাখার যে বিধান রাখা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক ও সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থি।” এছাড়া, খসড়া আইনের ৪৭(৩) ধারায় রাষ্ট্রপতি শাস্তি মওকুফ করলে চাকরিতে পুনর্বহালের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।