প্রসঙ্গ : নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট বিচারকদের ওপর মাতব্বরি করবেন আইনমন্ত্রী : ব্যারিস্টার মইনুল
এনামুল হক : ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭’ নামে বহুল আলোচিত এই গেজেট প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে, নিম্ন আদালতের বিচারকরা আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছেন। এখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর মাতব্বরি করবেন আইনমন্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন টিভিএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দায়িত্বে থাকার কারণে সরকার এই গেজেট প্রকাশ করতে সাহস পায়নি। ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মূল বক্তব্য বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করবে সুপ্রিম কোর্ট। এখন নতুন গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হবেন প্রধান নিয়ন্ত্রক। রাষ্ট্রপতিকে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন। বাহাত্তরের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা ছিল, অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, কর্মস্থল নির্ধারণ, ছুটি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকবে। রাষ্ট্রপতি বা আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল না। নতুন গেজেটে এ বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি মাসদার হোসেন মামলার রায়েরও পরিপন্থি।
মইনুল হোসেন বলেন, এস কে সিনহা যে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল তা পরিবর্তন সরকার গ্রহণ করেনি। এ কারণে গেজেট প্রকাশে দেরী হয়েছে। এই গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোটাই চলে গেল। এটা নিয়ে আন্দোলন-প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকরা চাইবেন না সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে পরিচিতি পেতে। আমি দেখছিÑ সব জায়গায় অনর্থক গ-গোল সৃষ্টি হয়েছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে শুধু সরকার থাকবে আর পার্লামেন্ট বিচার বিভাগ কিছুই থাকবে না। এমন একটা চিন্তা-ভাবনা নিয়েই দেশটা চলছে। যা বাকশালের সময় হয়েছিল।
ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, নতুন এ গেজেট সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভবিষ্যতে এই গেজেট সংশোধন করতে হবে। তা না হলে সংবিধান পরিবর্তন করা লাগতে পারে। বিচার বিভাগের যে স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। এখন নতুন এই গেজেটে তা অকার্যকর হয়ে পড়বে। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের ওপরও আস্থা হারাবে। বিচার বিভাগ যখন নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, মানুষ তখন ন্যায়বিচার থেকে স্বাভাবিকভাবেই বঞ্চিত হবে।
মাসদার হোসেন মামলার ১২ দফার সম্পূর্ণটাই ব্যত্যয় ঘটেছে গেজেটে। এখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতো হয়ে গেছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব থাকবে না। তারা সরকারের আদেশ-নিষেধ শুনতে বাধ্য থাকবেন। যা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর একটি বড় ধরনের আঘাত বলে মনে করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী