রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে যুক্ত করা উচিত মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেসের ৫ সুপারিশ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : চলমান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ৫ দফা সুপারিশ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেস। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে ভিত্তি ধরে শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ীভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, বাস্তুচ্যুতদের মূল ভূমিতে বা পছন্দনীয় কাছাকাছি কোনো স্থানে প্রত্যাবাসন করা, জীবনধারণের মৌলিক সব প্রয়োজন মেটাতে অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রত্যাবাসনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে উদার মানদ- নির্ধারণ এবং সকল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো।
নিউ ইয়কের্র স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে মহাসচিবের পক্ষে এসব সুপারিশ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রি ফেল্টম্যান।
গত ৬ নভেম্বর মিয়ানমার পরিস্থিতির উপর প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণ করে ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিবৃতি দিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবারের বৈঠকে মহাসচিবের সেই বিবৃতি তুলে ধরতে গিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে ওই ৫ সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় বলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর মাসের সভাপতি জাপানের সভাপতিত্বে এ সভায় পরিষদের সদস্য দেশগুলোর বাইরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকেও বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, এখনও প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ৪০০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে প্রতীয়মান হয়, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত সম্মতিপত্রের শর্ত অনুযায়ী শিগগিরই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে এবং মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক দুর্দশার যে মূল কারণ, তা দূর করতে এ সংক্রান্ত বহুবিধ বিষয় ও অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সহাযোগিতা ও পর্যবেক্ষণ একান্তভাবে প্রয়োজন, আর তা করতে হবে অসহায় রোহিঙ্গাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে।
মোমেন তার বক্তব্যে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত অসহায় নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দেওয়া, সহিংসতার নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন তদন্ত ও বিচার, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশের উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলোয় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ওপর রাখাইনে যে ভয়াবহ যৌন সহিংসতা হয়েছে, নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কাছ থেকে শোনা সেই নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন।
প্যাটেন বলেন, যারা এখনও যৌন সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন এবং যারা নিষ্ঠুরতম এই যৌন সহিংসতার দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন, তাদের সকলেই আমাকে বলেছেন, নারকীয়ভাবে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং সেনাক্যাম্পে আটক রেখে দিনের পর দিন যৌনদাসত্বে বাধ্য করার মতো জঘন্য কাজ করেছে। তিনি সহিংসতার শিকার এমন অনেক নারীর উদাহরণ দেন, যাদের কেউ কেউ টানা ৪৫ দিন সেনা ক্যাম্পে ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী