নারীদের ক্ষেত খামারে যেতে নিষেধ করার ঘটনায় ইমামসহ আটক ৩
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নারীদের ক্ষেত খামারে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে মসজিদের ইমাম আবু মুছাকে আটক করে পুলিশ।
ক্ষেতের ফসল নষ্ট ও অসামাজিক কার্যকলাপের অজুহাত তুলে শুক্রবার উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও কতিপয় মুসল্লি নারীদের ক্ষেত খামারে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন। গত ৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের পর কল্যাণপুর জামে মসজিদে এক বৈঠকে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাতে ওই সিদ্ধান্ত মসজিদের মাইকে ঘোষণাও করা হয়।
জানা যায়, ওই এলাকার অনেক নারী ক্ষেতে কাজ করার পাশাপাশি গরু-ছাগল চড়ানো এবং পশু খাদ্যের জন্য ঘাস কাটতে মাঠে যান। কেউ কেউ দুপুরে শ্রমজীবী স্বামী-সন্তানের খাবার সরবরাহের জন্যও ক্ষেতে যান। কিন্তু মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাঠে যেতে বারণ করা হয়। এতে মারাত্মক বিপাকে পড়েন তারা।
তবে এ ঘোষণার পক্ষে পেশ ইমাম আবু মুসার দাবি, তারা এলাকার ভালোর জন্য মসজিদে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে নারীদের ক্ষেত খামারে যাওয়া বন্ধ করেছেন। কারণ, নারীরা ক্ষেতে গিয়ে ফসল চুরি করেন। কেউ কেউ অসামাজিক কাজ করেন। তাছাড়া নারীদের পর্দায় রাখা মুসলমান হিসেবে আমাদের ইমানি দায়িত্ব।
এ ঘটনার পর শ্রমজীবী নারী ও নারীবাদী সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা আলো খাতুন বলেন, আমি বাড়িতে ছাগল পালন করি। প্রতিদিন ছাগলের জন্য মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করতাম। কিন্তু মসজিদে ঘোষণার পর ভয়ে ঘাস কাটতে যেতে পারছি না।
মহিলা ইউপি সদস্য জাহানারা খাতুন বলেন, ক্ষেতের ফসল তো কেবল নারীরা চুরি করে না, পুরুষরাও করে। সুতরাং যে অপরাধ করবে তার সাজা হবে। তা না করে ঢালাওভাবে নারীদের ক্ষেত খামারের কাজে যেতে বারণ করা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান (ইউএনও) জানান, কল্যাণপুর মসজিদ কমিটির সভাপতি মোতালেব, সেক্রেটারি মতিউর রহমান ও পেশ ইমাম আবু মুসাকে পুলিশ আটক করেছে। সম্পাদনা : মাহফুজ উদ্দিন খান