বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের একটি প্রামাণ্য দলিল ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ’
শাহানুজ্জামান টিটু : জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক ডা. শামসুদ্দীন আহমেদকে তার চাচা মৌলভী মঈনদ্দিন হোসেন হাসপাতালে না যাওয়ার জন্য হাত ধরে অনুরোধ করলে শান্ত হাসি হেসে বলেছিলেন, ‘এখনই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। তাছাড়া জেনেভা কনভেশনের শর্ত অনুযায়ী হাসপাতালে যুদ্ধ বা রক্তক্ষয় হওয়ার কথা নয়।’ অথচ পাকসেনারা ওয়ার্ডে ঢুকে চিকিৎসাসেবাদানরত ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ, শ্যামল কান্তি লালাকে হত্যা করা হয়। এভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর হত্যার শিকার হয়েছেন শহীদ চিকিৎসকরা।
‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ’ গ্রন্থের লেখক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভূমিকা ও তাদের আত্মবলিদানের কাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক গ্রন্থে লেখক আলাদা করে কেন শহীদ চিকিৎসকদের নিয়ে পৃথক বই প্রকাশ করলেনÑ এর ব্যাখা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা সমভাবে ধারণ করেও আমরা প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল নির্বিচারে, গণহত্যার আদলে বা সম্মুখ সমরে। বাংলাদেশকে মেধাগতভাবে বিকালঙ্গ করার নীলনকশা তৈরি করে। শিশু যেন জন্মগত মনোস্নায়বিক ত্রুটি নিয়ে প্রসূত হয়; বিশ^ মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি দেশ সংযোজিত হলেও দেশটি মেধা ও মননে যেন কখনো মেরুদ- খাড়া করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য জিঘাংসুদের আঘাতের লক্ষ্য নির্ধারিত হয় দেশের মেধাবীশ্রেণী।
শহীদ চিকিৎসকদের সন্ধান করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের কার্যালয়, বিএমএ ভবনে স্মৃতিফলকে প্রায় ৭০ জন শহীদ চিকিৎসকের নাম রয়েছে। এই তালিকার বাইরেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শহীদ চিকিৎসক। প্রায় তিন দশক পর শহীদ চিৎিসকদের তথ্য খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য।
‘যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক, পশু সেইসব পশুদের’ লেখকের এই লেখনির মধ্যে দিয়ে শহীদ চিকিৎসকদের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বইটি শুরু করা হয়েছে শহীদ চিকিৎসক ডা. অমলেন্দু দাক্ষীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা দিয়ে।