ব্যাংকে আমানতকারীদের আস্থার সংকট
আনোয়ার হোসেন : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকিং ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে আস্থার উপর নির্ভরশীল। অথচ সম্প্রতি একটি ব্যাংকে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাহকরা আমানতের অর্থ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও ব্যাংকটি চাহিদা মতো সেই অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারছে না। ব্যবসার চেয়ে এই সংকট ব্যবস্থাপনাই ব্যাংকটির জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিআইবিএম আয়োজিত ‘করর্পোরেট ইথিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইন ব্যাংকস ঃ বাংলাদেশ পারস্পেক্টিভ’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানিভিত্তিক অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠছে। তবে অর্থ পাচার নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা পুরোপুরি সত্য নয়। সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে পরিমাণ অর্থ রাখার কথা বলা হয় তার পরিমাণ অতো বেশি হবে না। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় কঠোর অবস্থানে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিএফআইইউ যৌথভাবে কাজ করছে। কর্মশালায় বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নৈতিকতার কথা। বলা হয়েছে, প্রায় ৭৩ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা অভাবে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বাড়ছে। অনিয়মের শাস্তি না হওয়াও এর জন্য দায়ী। এছাড়াও সচেতনতার অভাব, নৈতিকতা বিষয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব এবং ব্যাংকারদের অল্প বেতন-ভাতাও এর জন্য দায়ী। ২০০ জন ব্যাংকারের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
কর্মশালায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, ভোগবাদী অর্থনীতির কারণে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় সবখানেই দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে ব্যাংকের উপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর উন্নতি করতে হবে। এজন্য মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য আর্থিক ন্যায়পাল গঠন করতে হবে।
মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকের আস্থা সংকট খেলাপি ঋণের চেয়েও ভয়াবহ। ইমেজ সংকট একটি ব্যাংকের জন্য খুবই খারাপ দিক। ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের জন্য অস্বাভাবিক।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, পারিবারিকভাবেই নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। অন্যের টাকায় ব্যবসা করা হয় ব্যাংকে । তাই ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা খুবই জরুরী। ব্যাংক ডাকাতির চেয়েও বড় অপরাধী ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা। এদের শাস্তি হতে হবে। ব্যাংকের সবক্ষেত্রেই কাউকে রোল মডেল হিসেবে নিতে হবে। তবে ব্যাংকে ম্যানেজার যদি চোর হয়, তাকে রোল মডেল বানানো যাবে না।