মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশে স্বপ্নের একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল : ড. আতিউর রহমান
সাগর গনি : মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশে স্বপ্নের একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ মানুষ, কৃষকের সন্তান। প্রায় ৮০ শতাংশের মতো ছিলেন কৃষকের সন্তান। সবার আশা ছিল, আমরা এমন একটা দেশ পাব যেখানে সবাই মিলে দেশকে উন্নত করব, একটা সাম্যের অর্থনীতি চালু হবে। বঙ্গবন্ধু ঠিক সেই রকম একটা কৌশলই গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মানুষে-মানুষে, নারী-পুরুষে ও শহর-গ্রামের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল তা কমিয়ে আনার একটা সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেছিলেন। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর সেই আকাক্সক্ষার আলোকেই কাজ হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে এসে আমরা একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল ঘাতকেরা। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা আবার দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা এখন অনেকটাই ভালো অবস্থানে আছি। দেশের অর্থনীতি এখনো একটা ভালো পর্যায়ে রয়েছে। হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইকোনমি গ্রো করছে। যেমন চলতি বছর ইকোনমি ৭ শতাংশের উপরে গ্রো করেছে। গত এক দশক ধরে সাড়ে ছয় শতাংশ করে গ্রো করছিল। সাড়া পৃথিবীর ইকোনমির যে গ্রোথরেট তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের ইকোনমিটাও এগোচ্ছে বলা যায়। সুতরাং এটা একটা পজেটিভ দিক।
আমাদের দেশে দারিদ্রের হার কমেছে। যখন আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৮০ ডলারের নিচে। সেটা এখন ১৬০০ ডলারের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই উন্নতি করেছি।
তখন পাকিস্তানের যে মাথাপিছু আয় ছিল তার দুই-তৃতীয়াংশ ছিলাম আমরা। এখন পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি। মাথাপিছু প্রায় ৫৮ ডলার বেশি ইনকাম আমাদের দেশের। তখন আমাদের রিজার্ভ ছিলই না। ১৯৭২ সালে আমাদের এক ডলারও রিজার্ভ ছিল না। সেখানে আজকে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান দেশের রিজার্ভ দিয়ে প্রায় আট মাসের বেশি সময় আমদানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
১৯৭২ সালে আমাদের জীবনের গড় আয়ু ছিল আটচল্লিশ বছরেরও কম। এখন আমাদের গড় আয়ু বাহাত্তর বছরের উপরে উঠে গেছে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার বেড়েছে। তৎকালীন সময়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেত। এখন প্রত্যেকটি শিশু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য স্কুলে যায়। প্রাথমিক শিক্ষার হয়তো এখনো মানটা তেমন উন্নত হয়নি কিন্তু সবাই শিক্ষার জন্য স্কুলে যায়। অতীতে আমাদের দেশের কোনো কর্ম ক্ষেত্রে ফরমালি নারীরা অংশগ্রহণ করত না। বর্তমানে দেশের পুরো শিল্পায়নের বেশিরভাগই নারী শ্রমিক। নারীরা যখন বিভিন্ন সেক্টরে যায় কাজ করতে তখন তাদের স্বাধীনতা বাড়ে। তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে, তারা সমাজে একটা ভারসাম্য তৈরি করেছে। স্বাধীনতার পর অনেকবছর ধরে দেশ সামরিক শাসকদের হাতে ছিল। তা না হলে আমরা আরও উন্নয়ন করতে পারতাম। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা গত প্রায় টানা ৯ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনিই পারবেন দেশকে এগিয়ে নিতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গোটা সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার পাশে থাকা উচিত আমাদের সবার। সম্পাদনা : আশিক রহমান