দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু কথাই নয় কাজও করে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন
আশিক রহমান : দেশের সুশাসন, গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা শুধু কথাই বলে যাচ্ছি না, কাজও করছি। যেখানেই অন্যায়, অপরাধ, সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে সেখানেই আমরা কথা বলছি বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোর্টের ওপর আঘাত এলো আমরা সেখানে দাঁড়ালাম। কোর্টকে রক্ষা করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেছি। এখনো কোনো অন্যায়-অপরাধ হলে আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমরা সচেষ্ট হই। জনগণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তখনই অভিযোগগুলো আনা হলো যখন তাদের (সরকারের) বিরুদ্ধে রায়টা গেল। এতদিন চেপে থাকল। আমার কথা হলো, যদি সত্যিই তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকত তাহলে তা চেপে রাখার কথা নয়। রায় যখন তাদের বিপক্ষে গেল, তখন তাকে (সাবেক প্রধান বিচারপতি) যেভাবে হেয় করেছে, আমি বলবÑ সুপ্রিম কোর্ট ও সংবিধানের ওপর আঘাত করেছে, যা একদমই উচিত হয়নি। বিশেষ করে বিচার বিভাগের ওপর যে আঘাতগুলো দিয়েছে তা সবচেয়ে মন্দ কাজ।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, অতি সম্প্রতি ব্যাংক খাত সম্পর্কে অনেক জিনিস বের হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কথা বলছেন। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, তিনি তো পুরোপুরি আওয়ামী লীগ সমর্থক। তিনিও তো বলছেন, কীভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ড. এবি মির্জা আজিজুলসহ যত বিশেষজ্ঞ রয়েছেন সবাই একই কথা বলছেন। এগুলো কেন হচ্ছে, কারা করছে, কেন এতগুলো ব্যাংক দেওয়া হচ্ছে এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের ইন্টারভিউ করতে পারেন।
তিনি বলেন, যেসব দুই নম্বরি কাজগুলো করেছে যেকোনো দল সরকারের থেকে এসব ব্যাপারে তো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে এখন যে ব্যাংকগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে তিন নম্বরি কায়দায়, এসবের জবাবদিহিতা জনগণ মিলে আদায় করতে হবে। এটা শুধু আমিই বলছি না, অর্থমন্ত্রীও বলছেন এ বিষয়ে তদন্ত করো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এদেশ। শহীদদের ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ সম্পর্কে সংবিধানে লেখা আছে। জনগণ ক্ষমতার মালিক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। তারা সকল মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ কার্যকরভাবে মানুষের আইনের আশ্রয় নিশ্চিত করবে। কেউ অন্যায়ের শিকার হলে তারা আইনের আশ্রয় নিবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। এসব তো সব সংবিধানে লেখা আছে। এসব চিহ্নিত করতে তো কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা শপথ নেন যে, আমরা সংবিধান অনুযায়ী দেশ চালাব, আমার আহ্বান তাদের গিয়ে প্রশ্ন করুনÑ যে শপথ আপনারা নিয়েছেন তা কি আপনারা হালকাভাবে দেখেন?
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা যাবে নাÑ এটা আমাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও কখনো আমরা ধর্মের অপব্যবহার করিনি। বিভেদ সৃষ্টি, অন্যায়ভাবে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য আমরা এমন কিছু করিনি। সব ব্যাপারে এত সুন্দর একটা ঐক্যমত রয়েছে যে, মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা ঘটছে এসবকে আমরা সবাই ঘৃণা করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে তা আমরা ভাবতেই পারি না। কীভাবে আমাদের হিন্দু বা সংখ্যালঘু ভাইদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এমনটি করে তারা বাংলাদেশের মানুষ হতেই পারে না। সত্যিকার অর্থে বাঙালি হতে পারে না। আমরা এসব কোনোদিন করিনি। কিছু মানুষ এসব করাচ্ছে। আর এখানে সরকার এই জায়গায় মহা ব্যর্থ। অনেক সময় তারা সুবিধাবাদী ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রদায়িকতাকে নানাভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার কুচিন্তা থেকে এসব করে। যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সঙ্গে যায় না। এমনটি করা মোটেও সঠিক কাজ নয় বলেও মনে করেন এই প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।