অসাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ‘জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধে আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে দলীয় সিদ্ধান্ত’
রিকু আমির : অসাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। পাক হানাদারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে সব বয়সী-শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নেমেছিল।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তুরস্ক সফর থেকে ভোরে দেশে ফিরে সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানান; বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পরে ফ্রান্স সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নাল আবেদিন।
বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্যই তারা ওই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
এরপর একে একে মন্ত্রীসভার সদস্য,বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার দলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সকাল থেকেই মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। মূহুর্তের মধ্যেই ফুলে ফুলে ভরে উঠে ভয়াবহ স্মৃতিঘেরা বধ্যভূমি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এ দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই; তারা সফল হবে না। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, জামায়াতের পরিকল্পনায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। জামায়াত নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা জামায়াত নিষিদ্ধে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছি।
নতুন প্রজন্মকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চোখ কান খোলা রাখতে হবে। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির কাঁধে ভর করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। কেউ যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে। দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে জাতীয় ও জনগণের স্বার্থে শহীদের স্বপ্নকে সামনে রেখে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হলে ঐক্যের প্রয়োজন। বহু দল থাকবে, বহু মত থাকবে। তার মধ্যে মৌলিক লক্ষ্যক সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজকে এটা বুঝতে হবে। তাদের মধ্য থেকে সেই শক্তি গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে যে চেতনা ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের আত্মমুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।