পাক রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর কাজীর সঙ্গে ২০বার গোপন বৈঠক করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্যের গুজরাটে ২০১৭’র বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। আর সম্ভবত এই উপলব্ধিতে মোদি নির্বাচনি প্রচারে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ এনেছিলেন, যার অনেকগুলো বুমেরাং হয়ে ফিরেছে তার এবং বিজেপির দিকেই। বিকাশ নয়, গুজরাটের শেষ দফা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বারবার তিনি পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। কিন্তু কংগ্রেসকে পাকিস্তান শেলে বিঁধতে গিয়ে এখন নিজেই জড়িয়ে পড়েছেন জালে। কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন- এমনই অভিযোগ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তারপরেই প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপি নিজেও একই দোষে দুষ্ট। পাকিস্তানের সঙ্গে মণিশঙ্কর আইয়ারের গোপন বৈঠক হয়েছে কিনা তার সত্যতা প্রকাশ্যে না এলেও, আদভানি যে পর পর ২০বার পাকিস্তানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে। এনডিএ-এর প্রথম দফায় নাকি একাধিকবার তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদভানি। ২০০০ সালে নাকি এল কে আদভানি তৎকালীন ভারতে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর কাজীর সঙ্গে ২০বার গোপনে বৈঠক করেছিলেন। তার প্রায় ৮ বছর পর উপ-প্রধানমন্ত্রী তার লেখা বই মাই কান্ট্রি, মাই লাইফ বইয়ে এই গোপন বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আদভানির সঙ্গে পাক রাষ্ট্রদূত কাজীর গোপন বৈঠকের যোগসূত্র ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক করণ থাপার। তিনি অনেকটা এই দুই নেতার মধ্যে দূতের কাজ করতেন। ২০০৮-এ করণ থাপর বেসরকারি দৈনিকে একটি কলামে লিখেছিলেন, আদভানির বাসভবন প্যানডারা রোডে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীই পাক রাষ্ট্রদূত কাজীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকটি আয়োজন করেছিলেন। সকাল ১০টায় হয়েছিল বৈঠক। তখন থাপরের সঙ্গে আদভানির বাসভবনে এসেছিলেন কাজী। যতক্ষণ বৈঠক চলেছিল, ততক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করেছিলেন থাপর। ৯০ মিনিট ধরে চলেছিল গোপন বৈঠক। তার পরের বছরও চলেছিল গোপন বৈঠক। তবে সেসময় বৈঠকগুলো হতো গভীর রাতে। একমাত্র নিরাপত্তারক্ষী আর করণ থাপারই জানতেন সে খবর। থাপার সেই কলামে আরও লিখেছিলেন, কাজী এবং আদভানি হঠাৎ করে কোথাও উধাও হয়ে যেতেন। তখন বৈঠকখানায় বসে আদভানির স্ত্রীর সঙ্গে বসে গল্প করতে হতো তাকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর চায়ের কাপ হাতে আবার স্টাডি রুমে ফিরে আসতেন আদভানি এবং কাজী। এই ২০বার গোপন বৈঠকের ফলশ্রুতি ছিল বাজপেয়ির লাহোর যাত্রা। কারগিল যুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হলেও কাজীর সঙ্গে আদভানির সম্পর্কে এতটুকু চিড় ধরেনি। কাজীকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার কথা বলার আগে শেষবার বৈঠকটি হয়েছিল আদভানির বাড়িতেই। তৎকালীন র’ প্রধান এএস দৌলত তার বই কাশ্মীর, দ্যা বাজপেয়ি ইয়ার-এ লিখেছিলেন- আদভানিকে আগ্রা সামিটের নির্মাতা বলে উল্লেখ করেছিলেন তৎকালীন পাক রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর কাজী।