প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো প্রেস কর্মচারীর মাধ্যমে!
সুজন কৈরী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিআইডির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরো ৮ সদস্যকে। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর নাটোর ও পাবনা জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ইসামীকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে সিআইডির একটি বিশেষ দল। পরদিনে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রকিবুলের দেওয়া তথ্যে গত বুধবার জামালপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় সাইফুল ইসলামকে। পরে তার দেওয়া তথ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় খান বাহাদুর নামে এক যুবককে। সে ইন্দিরা রোডের একটি প্রেসে ২০১০ সাল থেকে কাজ করছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে বিগত ৪ বছর ধরে। ওই প্রেসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। মূলত বাহাদুরের মাধ্যমেই ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে চলে যেত সাইফুলের হাতে। তারপরই রকিবুল হাসান ইসামী তা ভর্তিচ্ছুদের কাছে বিক্রি করতেন।
নজরুল ইসলাম জানান, খান বাহাদুরের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল সাইফুলের। আর সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় ছিল রকিবুল হাসানের। খান বাহাদুরের প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপার বিষয়টি জানতে পেরে সাইফুল বিষয়টি রকিবুলকে জানায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বাড়তি আয়ের বিষয়ে সাইফুলকে প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুরের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে বলে রকিবুল। এরপরই প্রেস কর্মচারীসহ ৩ জনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্যে গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর জিগাতলা থেকে গ্রেফতার করা হয় নাজমুল হাসান নাঈমকে। পরে ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বনি ইসরাইল ও রাজশাহীর বিনোদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় মো. মারুফ হোসেনকে। এই বনি ও মারুফ দুজনই ভর্তি জালিয়াতির জন্য ছাত্র সংগ্রহ এবং রকিবুল হাসান ইসামীকে ছাত্রদের তথ্য সরবরাহ করতো।
প্রশ্নফাঁস চক্রের প্রায় সব সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করা একটি সামাজিক ব্যাধি। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকার ঘটনা সামাজিক ব্যাধি থেকে সামাজিক অবক্ষয়ে রূপ নিয়েছে। যারা এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিচ্ছে- তারাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে ভালো ভালো বিষয়ে পড়াশুনা করছে। আর তারাই যদি পরবর্তীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ আসনে উপনীত হয়, তাহলে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আর চলতি বছর এই পরীক্ষা নিয়ে ডিজিটাল জালিয়াতি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ থেকে ৭ লাখ টাকার লেনদেন হতো।
মোল্যা নজরুল জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন কারাগারে, ৩ জন রিমান্ডে এবং ২ জন গ্রেফতার আছেন। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ