সুদ : আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ
মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ একটা অমানবিক অর্থনৈতিক কর্মকা-। কেননা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়, ঋণ তো অভাবীরা গ্রহণ করেন। আর যারা ঋণ দেন, তারা তো নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত অর্থটাই কেবল ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করেন। আপনার গ্রাম বা মহল্লার দরিদ্র চাষি, একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা একজন শ্রমজীবীর কথা চিন্তা করে দেখুন, সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ করলে তার অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মনে করি, জমির নামক এক ব্যক্তির নিজস্ব আয়ে বছরে দশ মাস ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। শেষ দুই মাসে সে সুদে টাকা নিয়ে সংসারের আয় বাড়ানোর কাজে বিনিয়োগ করল। দ্বিতীয় বছর সব মিলিয়ে সে বারো মাস চলার মতো সামর্থ্য অর্জন করল। কিন্তু তা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী বছরের ঋণ এবং সুদ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থে তার নয় মাস চলল। সুতরাং এ বছর তার তিন মাসের ব্যয় নির্বাহ করতে হবে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করে। এবার হিসাব করে দেখুন, সুদে টাকা ধার নিয়ে এ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারটির পথে বসতে ক’বছর সময়ের প্রয়োজন হবে? এভাবেই সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মারপ্যাঁচে পড়ে একটি পরিবার থেকে শুরু করে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে হতদরিদ্র ও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অর্থনীতি অনেক জটিল বিষয়। এ বিষয়ে বড় বড় প-িত যারা আছেন, তারা এর পক্ষে-বিপক্ষে জটিল জটিল যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম। এমনকি যুক্তি আর উদাহরণ টেনে তারা সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাহাত্ম্যও প্রমাণ করে ছাড়বেন, সন্দেহ নেই তাতে। আমার মতো স্বল্প বিদ্যা নিয়ে এসব বিতর্ক করাটাই এক প্রকার আহাম্মকি। তবে সবিনয়ে একটা কথা তো জিজ্ঞেস করতে পারি, আমাদের দেশের যেসব এনজিও সুদের বিনিময়ে অর্থ বিনিয়োগ করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে আসছে- বিগত দশ-বিশ বছরের একটা পরিসংখ্যান নিয়ে দেখুন তো, এতে ফুলেফেঁপে উঠছে কারা? দরিদ্র ঋণগ্রহীতারা, নাকি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলো। নিঃসন্দেহ দ্বিতীয় পক্ষই। কিন্তু কেন…?
একজন মুসলমান সর্বদা লক্ষ্য রাখবেন তার উপার্জন যেন শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো অবৈধ পন্থায় না হয়, এমনকি সন্দেহ থেকেও দূরে থাকবেন। তিনি এও খেয়াল রাখবেন, তার উপার্জনে যেন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুদ প্রবেশ না করে। কেননা কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা: ৩৭৬)। সুতরাং শত-সহ¯্র প্রলোভন একজন মুসলমান আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করতে পারে না। সুদ দাতা-গ্রহীতা উভয়ের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর সতর্কবাণী এবং অভিশাপও দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরের প্রতি ও সুদদাতার প্রতি। রাবী বলেন, আমি বললাম, এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষী দু’জনের প্রতিও। তিনি বললেন, আমরা কেবল তাই বর্ণনা করি যা আমরা শুনেছি। (মুসলিম: ৩৯৮৪)।
লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।