বিশ্ব অর্থনীতিতে গতিশীল পরিবর্তন আসবে
মোস্তফা আরিফ
বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে একটি প্রশ্ন বারবার উত্থাপিত হচ্ছে, বিগত এক দশক যে মন্দা, যা অনেকটাই কেটে গেছে, তা কি আবার ফিরে আসবে কিনা? অর্থনীতিবীদরা আশা করছেন, ২০১৮ সালে গতিশীল পরিবর্তন আসবে। ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে বিষয়গুলো সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচর হয় তা হচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগে ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বনির্ভরতা, কি ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে, সে ব্যাপারে পচ্ছন্দ অপচ্ছন্দের বিষয়টি জড়িত, কোন খাতে বিনিয়োগ করবে, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং একইভাবে প্রত্যাশিত নীতি ও দর্শন কিরূপ হবে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। একুশ শতকের প্রথম দশকে বিশ্বব্যাপী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারেনি এবং সুষ্ঠু সমাধানও করতে পারেনি। অর্থনীতিবীদরা বাজার ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং বাজার ব্যবস্থাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখতে একটি যৌক্তিক ধারণা প্রদানের চেষ্টা করেছে। বিষয়গুলো নিয়ে কেন এত প্রশ্ন উঠছে? উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে যদি আলোচনা করা হয়, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন জাগবে, কেমন গেল ২০১৭? অনেকেই বলতে পারেন, ২০১৭ এখনও শেষ হয়নি। দিনক্ষণের হিসাবে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি রয়েছে। তারপরও হিসাব মেলাতে শুরু করেছেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং বিশ্লেষকরা। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক মেরুকরণ, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংকট, চাপা উত্তেজনা কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিতে নব সূর্য উদয় হবে, এটাই আশা করছে উন্নত বিশ্ব। বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘ পরিসরে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি মহিরূহ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে, এই দুই শক্তিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই বিগত এক দশক উন্নত বিশ্বের বাজার ব্যবস্থাও স্থিতিশীল ছিল না। স্বল্প সময়ে এই বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসবে, সেটারও কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ব অর্থনীতিতে সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। এই দেশটি এখন ব্রেক্সিট নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ইইউ থেকে বেরিয়ে গিযে কতটা লাভবান হয়েছে ইংল্যান্ড সে বিষয়ে এখনও সুষ্ঠু বিচার করার সময় আসেনি। জার্মানির অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে অ্যাঞ্জেলা মরকেল সরকার কঠিন লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইইউকে পুনরুজ্জীবিত করতে ফ্রান্স এবং জার্মানি যৌথভাবে কাজ করছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ মুহূর্তে সঠিক পথে রয়েছে চায়না। তার বাজার ব্যবস্থা বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ ভাগ ছাড়িয়ে যেতে পারে। জাপান তার চাহিদার তুলনায় শতকরা ১ দশমিক ৫০ ভাগ বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এমনকি ২০১৮ সালে কর্মসংস্থান যদি শতকরা ১ ভাগ বৃদ্ধি পায় এবং বাণিজ্যে সমতা বিরাজ করে তাহলে রফতানি খাতে দৃঢ় অবস্থান করবে সূর্যদয়ের দেশটি। বেসরকারিখাতে বিনিয়োগকে আরো শক্তিশালী করতে সিঙ্গাপুর সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এরই ফলশ্রুতিতে আশা করা যাচ্ছে দেশটির প্রবৃদ্ধি শতকরা ৩ দশমিক ৩০ ভাগ ছাড়িযে যাবে। কিন্তু সিঙ্গাপুরকে প্রতিবেশি দেশ চাযনা এবং উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ভাবতে হয়, ভূরাজনৈতিক কারণেই সিঙ্গাপুরকে এই দুইটি দেশ নিয়ে ভাবতে হয়। চায়নার অর্থনীতিতে যদি স্থবিরতা বিরাজ করে এবং উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল হলে, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব বাণিজ্যে বাজার ব্যবস্থা সংরক্ষণ নীতি অবলম্বন করে তাহলে বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে সিঙ্গাপুর। তারপরেও আশা করা যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতিতে উদ্যমতা দেখা দেবে।
লেখক : উন্নয়ন কর্মী ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন