ক্ষমা চাওয়া আর নাকে খত দেওয়ার এই তো সুযোগ!
চিন্তা করতে হবে আমরা কী করবো? ‘রাজনীতি’ না ‘দানবীয় নীতি।’ আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে গর্ব করার জন্য যে কাজটি করতে পেরেছি তা হচ্ছে, দেশের জন্য যুদ্ধ করে একটি দেশের জন্ম দেওয়া এবং স্বাধীনতা অর্জন করা। মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা ছিলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। তার ডাকে আমরা যুদ্ধ করেছি। আর আমরা জাতি হিসাবে নিকৃষ্ট এ কারণে যে, আমরা তার নির্দেশ মেনে যুদ্ধ করলেও দেশের এই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা করেছি। ১৯৭৫-এ শুধু ক্ষমতার লোভে এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে এদেশে, এটা রাজনীতি নয়। পৃথিবীর সকল স্বাধীন দেশেই স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় কিন্তু বিজয় দিবস পালিত হয় না। বঙ্গবন্ধুই কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবস পালন করতে আমাদের শিখিয়ে গেছেন। আমি বিশ^াস করি, এর অন্যতম রাষ্ট্রীয় দর্শন হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় উৎসবের মাধ্যমে পরিশুদ্ধতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে ৩০ লাখ শহীদ, লাখ লাখ মা বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ৪৭ তম বিজয় অতিবাহিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে টেলিভিশনে এখন লাইভ অনুষ্ঠান, টক শো, আলোচনা অনুষ্ঠান, কনসার্ট কিংবা মেলা দেখানো হয়ে থাকে। বিজয় দিবসের উদ্যাপন বলতে পুরোদিনেই উৎসব করছি। দেশের খ্যাতিমান তারকারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দিনভর ছোটাছুটি করছেন, এই উৎসবে। রঙিনভাবে উদ্যাপন করছি বিজয় দিবস। এর পেছনে অনেক প্রাণ, রক্তের নদী, দুঃখ-কষ্ট, আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। বহু মানুষ অন্ধ হয়েছে, নিঃসন্তান হয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, বহু তরুণের জীবন নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এর পেছনে যা ছিল এর নাম ‘রাজনীতি’ নয়, ‘দানবীয় নীতি।’ আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা করে গেছেন। স্বাধীনতা লাভ করার পরেও এদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি দেখা গেছে। স্বৈরশাসন দেখেছি, স্বৈরাচারের আমল দেখেছি। গণতান্ত্রিক শাসকের দাবি করেও খালেদার বিএনপি স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছিল। কৃষকের ওপর গুলি নিক্ষেপসহ কিছু কিছু কর্মকা-ের মাধ্যমে স্বৈরাচারের সঙ্গে আর তাদের ফারাক কোথায় ছিল? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নৃশংসতা, দমন-পীড়ন চালিয়েছে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। প্রশাসন, জাতীয় সংসদ, জনসভার মাঠ, শিক্ষাঙ্গন, জলমহাল, খাল-জলাশয়, হাটবাজার সর্বত্র ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্য ছিল। প্রশাসন তাদের ইঙ্গিতে চলেছে। তখন সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতে হতো। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সমস্যা ফয়সালা জাতীয় সংসদে হয়নি, হয়েছে রাজপথে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে ২০১৪ সালে সেই দৃশ্য পুরো পাল্টে গেছে। জনগণ দেখেছে, ‘রাজনীতি’ হয়ে উঠেছে দানবনীতি। আগুনে পুড়ে কিংবা গুলি খেয়েও ২৪৭ জন মানুষকে মরতে হয়েছে, যাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। প্রাণহানি আর সংঘাতের ঘটনায় বিজয় দিবসে মানুষের প্রশ্নÑ এমন দেশ কী আমরা কখনো চেয়েছিলাম? তাই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হোকÑ আর নয় দানবীয় নীতি? গণতন্ত্র অনুশীলন ও চর্চার বিষয় হলেও যারা দানবীয় রাক্ষুসে নীতিতে রাজনীতি করে তাদের কাছে অর্থহীন শব্দ ‘গণতন্ত্র’! সাংবিধানিকভাবে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সুন্দর সুন্দর ‘নসিহত’ করেন প্রতিপক্ষকে। তার দল নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় অথচ তিনি নিজেই সশস্ত্রবাহিনী দিবসে যান না। কঠোর শব্দ বা বাক্যবাণ সাধারণ মানুষকে ঘায়েল করে না, কারণ তারা তো অপকর্ম করে না। অপকর্মকারীদেরই গায়ে লাগে। তাই ‘নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসার কথা’ বলা হয়। কিছুদিন ধরে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার কথা-বার্তা শুনে মনে হচ্ছে, এ কথায় তাদের গাত্রদহ শুরু হয়েছে। আমি তো মনে করি, এটা তো একটি বিরাট সুযোগ। জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে অতীত কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং নাকে খত দিতে হবে বিএনপিকে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন